Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:39 pm

বিএটির ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায়ে উদ্যোগ নিন

জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর একটি পণ্য হচ্ছে সিগারেট। তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বেই এটির প্রস্তুতকরণ ও বিপণন রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হওয়ায় বিশ্বের সব দেশেই এ পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনের ওপর উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপ করা হয়। সেই তুলনায় বাংলাদেশে তামাক পণ্য অনেক সস্তা। পাশাপাশি এখানে রেগুলেশন অনেক দুর্বল। এতে করে তামাক কোম্পানিগুলো নানা অনিয়ম করেও পার পেয়ে যায়। আর কর-রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা বাড়াতে থাকে। ফলে তারা সিগারেটের বাজার আরও সম্প্রসারণের সুযোগ পায়। অথচ বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সিগারেট কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘পুরোনো প্যাকেটে নতুন দামে বিক্রি: বিএটির রাজস্ব ফাঁকি ২১০.৮৬ কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, উচ্চস্তরের সিগারেট। প্যাকেট পুরোনো, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। প্রতি প্যাকেটে সরকার হারাচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা রাজস্ব। একইভাবে নিম্নস্তরের সিগারেটও পুরোনো প্যাকেট, নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে, যাতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। বাজেট ঘোষণা হয় ৬ জুন। কিন্তু ৫ জুনের আগেই বিপুল পরিমাণ সিগারেট ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে, যা বাজেটের পরপর বাজারে ছাড়া হয়েছে। সরকারকে পুরোনো প্যাকেটের রাজস্ব দেয়া হলেও বেশি দামে বিক্রির ওপর কোনো রাজস্ব দেয়া হয়নি। এতে শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ২১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

নতুন অর্থবছরেও পুরোনো অর্থবছরের প্যাকেটে সিগারেট বিক্রির এ প্রবণতা নতুন নয়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। মূলত তারা দেশের সবচেয়ে বড় করদাতা হওয়ায় সরকারও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা নমনীয় নীতি গ্রহণ করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তাছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের করপোরেট কমপ্ল্যায়েন্স অনুসরণ করবে বলেই প্রত্যাশিত। কিন্তু কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদনে নানা ধরনের অসঙ্গতিপর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি তামাক পাতার হিসাব মেলাতে গিয়ে তারা ৫০ হাজার কেজিরও বেশি পরিমাণ পাতা বাতাসে উড়ে যাওয়ার তথ্য নিজেদের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ধরনের তথ্যকে আজগুবি বলা চলে বৈকি।

তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসংঘের ঘোষিত সনদ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কনট্রোলে সাক্ষরকারী প্রথম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সালে আইনও প্রণয়ন করা হয়। এখন সে আইন যুগোপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব ফাঁকি রোধসহ তামাক কোম্পানির সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে মনোযোগী হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।