Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 11:12 am

বিএনপির ব্যবসায়ী নেতারা কোণঠাসা দাপুটে অবস্থানে সিলভার সেলিম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা কোণঠাসা থাকলেও দাপুটে অবস্থানে থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা এমএএইচ সেলিম ওরফে সিলভার সেলিম। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনকে নানাভাবে ম্যানেজ করে একের পর এক ব্যবসা সম্প্রসারণ করে চলেছেন সিলভার সেলিম। বিএনপির একাধিক নেতার প্রশ্ন সিলভার সেলিমের খুঁটির জোর কোথায়?

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। এ দীর্ঘ সময়ে বিএনপির শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আসলাম আলম ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খানের মতো শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা তাদের ব্যবসা সংকোচিত করে ফেলেছেন। অনেকে নিভু নিভু অবস্থায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালালেও দাপুটে অবস্থানে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যবসায়ী অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠজন সিলভার সেলিম। তিনি সিলভার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গড়ে তুলেছেন স্পিনিং মিল, ইয়ার্ন ডায়িং, ওয়েভিং, সলিড ডায়িং, প্রিন্টিং ও গার্মেন্টস ব্যবসা। রাজধানীর গুলশানের ‘সিলভার টাওয়ার’-এর মালিক সিলভার সেলিম এক সময় জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই ব্যবসা দিয়েই তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ফাঁকি, আয়কর ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকিসহ নানাভাবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজর এড়িয়ে নিজের ব্যবসা বড় করে তুলেছেন সিলভার সেলিম। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় সিলভার সেলিমের ব্যবসার সম্প্রসারণ নিয়ে বিএনপির একাধিক ব্যবসায়ী নেতাও প্রশ্ন তুলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিএনপি নেতা বলেন, সরকারি দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ম্যানেজ করে সিলভার সেলিম দাপটের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিএনপির শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা কোণঠাসায় থাকলেও সিলভার লাইন গ্রুপ কীভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হচ্ছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সন্ধ্যায় এমএএইচ সেলিম ওরফে সিলভার সেলিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি না। আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।’ এই কথা বলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চল মেহেন্দীকুঞ্জের একসময়ের হতদরিদ্র সেলিমের উত্থান হয় ১৯৯৮ সালের দিকে। বাগেরহাট জেলায় ১৯৭৮-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৮ বছর জেলা বিএনপির সভাপতির নেতৃত্ব দিতেন অ্যাডভোকেট মো. মোজাফ্ফর হোসেন। তিনি দল থেকে সরে দাঁড়ানোর পর জেলা বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিলভার সেলিম জেলা বিএনপির হাল ধরেন। এ সময় আকস্মিকভাবে তিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়নও বাগিয়ে নেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসন থেকে এমএএইচ সেলিম বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর শুরু হয় তার উত্থান। তিনি জনশক্তি ব্যবসার মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেন। হয়ে ওঠেন দলের বড় মাপের ডোনার। এভাবেই তিনি তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরেরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি।

জানা যায়, ১৯৫৫ সালের ১৩ মার্চ এমএএইচ সেলিম জš§গ্রহণ করেন। পিতা বেলায়েত হোসেন ছিলেন কৃষক। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই তিনি আদম ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এর ধারাবাহিকতায় হাওয়া ভবনের সুনজরে এসে দলের পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান। নিয়মিত দলকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে তিনি তারেক রহমানের নজরে আসেন। এরপর নিজের ব্যবসার প্রসারের পাশাপাশি ‘চ্যানেল ওয়ান’-এর বড় অংশের শেয়ারহোল্ডার হন তিনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে দুদকে মামলায় তিনি কারাগারে যান। পরে জামিনে মুক্ত হলেও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে তাকে আর দেখা যায়নি। তবে এখনও পর্যন্ত দলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় রয়েছেন বলে জানা যায়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে একাধিক সন্তান। তবে সেই স্ত্রীর সঙ্গে এখন আর সম্পর্ক নেই বলে জানা গেছে। পরবর্তী সময়ে সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীরের সঙ্গে দুই বছরের অধিককাল সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে।