নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাকরাইল, নয়াপল্টন, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ কাকরাইল, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির পর শান্তিনগর মোড়েও ছড়িয়ে পড়ে। শান্তিনগর মোড়ে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়া কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি বাস ও আটটি পিকআপ ভাঙচুর করেছেন। সকালে একটি বাস ও ৮টি পিকআপে করে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কাকরাইলে নেমে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছেন। এমন সময় বিএনপির সমাবেশ থেকে একজন আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। পরে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা গাড়িগুলো ভাঙচুর করেন নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে, সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে চলমান সমাবেশে কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বেলা সোয়া ৩টার দিকে নয়াপল্টনে তাদের মহাসমাবেশ থেকে হরতাল ঘোষণা দিয়ে মঞ্চ থেকে নামার পর তিনি টিয়ারশেলে আক্রান্ত হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শায়রুল বলেন, হরতাল ঘোষণা দিয়ে মঞ্চ থেকে নাম ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় কাঁদানে গ্যাসে তার চোখ জ্বালাপোড়া করছিল। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, বিএনপি আজ রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শনিবার নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি হরতালের ঘোষণা দেন।
ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল, বিজয়নগর এলাকায় সংঘর্ষ এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের এলাকায় বারবার বিকট শব্দের মধ্যে হরতালের ঘোষণা এলো। এর আগে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।’ তবে পরে তা সরিয়ে নেয়া হয়। পরে বিএনপির পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, আবার জানানো হয় আগামীকাল সারাদেশে হরতাল।
বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হন। একপর্যায়ে কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ব্যাপকভাবে কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কাকরাইল মোড়ে একটি পুলিশ বক্স ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা দুটি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। কাকরাইলের পর বেলা ২টার দিকে শান্তিনগর মোড় ও বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায়ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
অপরদিকে, রাজধানীর বিজয়নগরে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গতকাল বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা শুরু হয়। অন্যদিকে রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিএনপি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে।
অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে ৪১ জন পুলিশ সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানান। তিনি জানান, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৯ জন আহত পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে চলাকালে দায়িত্বরত অবস্থায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানা যায়নি। বেলা ৪টার দিকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ওই পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, মাথায় আঘাত নিয়ে এক কনস্টেবলকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।