বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের গোয়েন্দা বাহিনী তুলে নিচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যাঁরা গত সংসদ নির্বাচন করেছেন এবং ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন, এমন নেতাদের গোয়েন্দা বাহিনী তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বলা হচ্ছে, বিএনপি যদি নির্বাচন নাও করে, তাদের নির্বাচন করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।

সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটা ভয়াবহ কথা বলি আপনাদের। আপনাদের জানানো দরকার। বিএনপির যারা অ্যাকটিভ পলিটিকস করে, ইলেকশন করেছে বা করবে, এই ধরনের নেতাদের গোয়েন্দা বাহিনী তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের বলা হচ্ছে, ‘বিএনপি যদি নির্বাচন না করে, তাও তোমরা নির্বাচন করবা।’ আমি আজকে এটা আপনাদের প্রকাশ্যে বললাম। আমাদের অনেক নেতা এই অভিযোগ করেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আছে, যারা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত, সেসব কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাতে চাই যে দয়া করে অসংবিধানিক কাজের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। এ দেশের মানুষ বরাবরই যে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তারা তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এখন তারা সে অধিকার আদায় করে নেবে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘অন্যায়ভাবে বেআইনি নির্দেশের ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করবেন না। জনগণ যেখানে তার অধিকারের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে; সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে গ্রেপ্তার করাটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি। দয়া করে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আবারও পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীশূন্য করার চক্রান্ত শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, সরকারের এ কৌশলের অংশ হিসেবে সারাদেশে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো এবং সাজা দেয়া একই সঙ্গে শুরু করা হয়েছে। বিষয়টাকে হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলেও মনে করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

মির্জা ফখরুল বলেন, একদিকে পুরো পৃথিবী যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতার কথা বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলছে এই সরকারের বিরুদ্ধে, তখন এই সরকারের প্রধান এবং সরকারের মন্ত্রী যাঁরা আছেন, তাঁরা ও আওয়ামী লীগের নেতারা আবারও জনগণের সঙ্গে চরম প্রতারণার লক্ষ্যে মিথ্যা কথা বলছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাঁরা, তাঁদের দমন-নিপীড়ন করতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর তাঁদের আর ছাড়া হচ্ছে না। জামিন হলেও আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে যে ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল, গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে ঢুকিয়ে দেয়া, সেই কাজগুলো আবার শুরু হয়েছে।

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে যে, জনগণ তাদের আর গ্রহণ করবে না। তাই কোনোভাবেই তারা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাইছে না। তবে মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, মানুষ প্রতিবাদ করছেন। এবার সেটা আর করতে দেবেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে, জনগণের চাহিদা বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করুন। একটা নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ তাঁদের অধিকার কীভাবে আদায় করে নিতে হয়, তা তাঁরা জানেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিবের এসব অভিযোগকে অসত্য ও ভিত্তিহীন বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, এ অভিযোগের ব্যাপারে তারা (বিএনপি) কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে গোয়েন্দা সংস্থা সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করে থাকে। এর বাইরে কাউকে তুলে নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।

বিএনপির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) রাজনৈতিক উদ্দেশে বিভিন্ন অসত্য অভিযোগ করছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০