নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গতকাল বুধবার বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষের পর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দলটির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখান থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
তবে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে নয়াপল্টনে ছুটে এলেও তাকে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক হামলা। পুলিশ গেট বন্ধ করে ভেতরে তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ব্যবস্থা করছে। এটা অসাংবিধানিক।’
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিকর্মীরা গতকাল সকাল থেকে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
বিকালে তারা যখন বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সেøাগান দিচ্ছিলেন, তারই একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপিকর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে নয়াপল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে আকবর নামে ৩০ বছর বয়সী একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
তিনি বলেন, নিহত ওই যুবকের শরীরে ‘ছররা গুলির চিহ্ন’ রয়েছে। আহত আরও অন্তত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আটক হওয়ার আগে সংঘর্ষ চলার সময় রুহুল কবির রিজভী টেলিফোনে বলেন, “নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক কর্মীকে আহত অবস্থায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘১০ তারিখে বিএনপির সমাবেশের স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি, কিন্তু আজ নয়াপল্টন পার্টি অফিসের সামনে উভয় পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বারবার অনুরোধ করার পরও রাস্তা ছেড়ে দেয়নি। পরে তাদের ওঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এভাবেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।’