নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না থাকায় আফসোস করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (আফসোস) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় দেশি সাংবাদিকদের পাশাপাশি কিছু বিদেশি সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
এবারের নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, টার্নআউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ ও জাপানের জোরালো সম্পর্ক ও উন্নয়নে ভূমিকার কথা তুলে ধরে জাপানি এক সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশ কেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমাদের সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নের জন্য। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পর্ক আছে কিছু দেশের সঙ্গে, যেমন ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স। মেট্রোরেলের অর্থ জোগাচ্ছে জাপান। আমার পার্থক্য করা উচিত হবে না। বন্ধু বন্ধুই। সবাই আমাদের বন্ধু।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় বাংলাদেশে ‘একতরফা’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ওয়ান সাইডেড ইলেকশন হচ্ছে না, এখানে হচ্ছে ওয়ান সাইডেড বিরোধিতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ও ভোটের দিন হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এ কারণে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে আওয়ামী লীগ বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রেখেছে কিনা জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রাখিনি। গণতন্ত্রে সব সময় দেখা যায়, কোনো নির্বাচন হলে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, ভোটারদের কেন্দ্রে আনা এটা আমাদের নেতাকর্মীদের টিম আছে, এই টিম সে কাজটা করবে। বেশিরভাগ ভোটারই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। কেউ ভোট দিতে আসতে একটু দেরি করতে পারেন, তাদের উৎসাহিত করার জন্য আমাদের টিম কাজ করবে।’
নির্বাচনের দিন দেয়া বিএনপির হরতালের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির হরতাল-অবরোধ আমরা দেখেছি। হরতালে দিন আরও বেশি যানজট হয়। হরতাল-অবরোধ শুধু তাদের কর্মসূচিতে আছে, বাস্তবে নেই।’
বিএনপির আন্দোলনকে ‘মরিচাধরা হাতিয়া’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই মরিচাধরা হাতিয়ার বিএনপির আগেও প্রয়োগ করেছে কোনো লাভ হয়নি। সামনে লাভ হবে এমন আশা করাটাও দুরুহ।’
গ্রাম ও শহরে ভোটার টার্ন আউট কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গ্রাম ও শহরকে আমি পার্থক্য করতে চাই না। আমি একটা কথাই বলব, টার্নআউট সন্তোষজনক হবে।’
আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পাবে ও বিরোধী দল কে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হলে এ বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এই মুহূর্তে এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমরা আশা করছি ইনশাল্লাহ আমরা এই নির্বাচনে বিজয়ী হবো। কত আসন সেটা আমি এখন বলতে চাই না। জনগণের ভালো স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, আমরা ভালো আসনই পাব। তবে কত আসন সেটা নিয়ে মির্জা ফখরুলের মতো গণক হতে চাই না। ইলেকশনের রেজাল্টই বিরোধী দল কে হবে সেটা বলে দেবে।’
হরতাল দেয়ার কারণে ভিসা নিতে আসবে কিনা বিএনপির ওপর এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন কোন ক্ষেত্রে ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে বা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেটা আমেরিকার ভিসানীতিতে স্পষ্টভাবে বলেছে। বিএনপি নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করছে সে ক্ষেত্রে কেন তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে না বা ভিসা নিতে আসবে না, এটা আমরা খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই, এটা আমাদের জিজ্ঞাসা।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় একশ স্থানে সহিংসতা হয়েছে ও তিনজন মারা গেছে। সেক্ষেত্রে এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি এমন কোনো নির্বাচন আপনি দেখেছেন? আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ায় বিধানসভা নির্বাচনে অনেক সহিংসতা হয়। এখানে প্রধান বিরোধী দল শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এমন না, তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।’
বিএনপির অভিযোগ সরকার ডামি প্রার্থী দিয়ে ডামি নির্বাচন করছে এমন প্রশ্নের জবাব কাদের বলেন, ‘বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল।’