নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেখলাম বিএনপির নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে। আর আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’ গতকাল সোমবার কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি রক্তদানে সক্ষম ব্যক্তিদের রক্ত দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
বিএনপির আমলে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা সিল মেরে ভোটবাক্স ভরিয়ে ফেলত বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আমলে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। বিএনপির সন্ত্রাসীরা সিল মারবে, বাক্স ভরবে, এটাই ছিল নীতি। বিএনপির আমলে মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে দেশ কত এগিয়ে যায়, বাংলাদেশ আজ তার উদাহরণ। আওয়ামী লীগ এর বাস্তবায়ন করেছে।’ বিএনপির ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে তারা ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য কী করেছে। বরং ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, পরে ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়।’ এ সময় তার সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলে। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় দেশ; সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও খুন-খারাবিতে ভরে যায়। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার্থীদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে তারা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাস ও ইউক্রেনের যুদ্ধের পর পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোয় মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। সেখানে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম। আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। বর্ডার গার্ড ও পুলিশ থেকে শুরু করে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছিÑযেখানে যতটুকু জমি আছে, যেন খাদ্য উৎপাদন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন সুখী পরিবার হয়। আমরা শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি। সাধারণ মানুষের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবী জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এর অর্থ এই নয় যে লুটপাট হবে। লুটপাট তো বিএনপি করেছে। আমরা সেটা করিনি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। লুটপাট করলে বাড়াতে পারতাম না।’
বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে যেকোনো খালি জায়গার যথোপযুক্ত ব্যবহারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কারও এক ইঞ্চি জমি যেন খালি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই কাজ করবে। যেখানেই খালি জায়গা, সেখানেই উৎপাদনে কাজ করবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকেও এটি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
উন্নত দেশগুলো যখন হিমশিম খায়, তখন আমরা সাশ্রয়ী হচ্ছি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার অর্থ এই নয়, আমরা লুটপাট করছি। লুটপাট তো বিএনপি করেছে। দেখেছি, বিএনপি নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষকে ভালো রাখতে আমরা কাজ করছি। সেটাই করব।’
জনসংখ্যা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যা এখন সাড়ে ১৬ কোটি। এ জনসংখ্যার হিসাবও কারও কারও পছন্দ হয় না। কেন? তাহলে তারা নিজেরাই সন্তান জন্ম দিক। আমরা খাবার দেব। আমরা চাই, প্রতিটি পরিবার সুখী-সমৃদ্ধ হবে। আমরা সে কাজটি করে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যার পর দেশের কী উন্নতি হয়েছে? চলে গেল মার্শাল ল’তে। ক্ষমতা দখল করে কুক্ষিগত করা হলো। তারা ক্ষমতায় এসে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে। ইনডেমনিটি দেয়। জাতির পিতার খুনিদের রক্ষা করে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় নিয়ে আসে। স্বাধীনতার চেতনা থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সব আয়োজন করল। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের চোর-ডাকাত বানাল। দেশের মানুষ কী পেল?’
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।