নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে ফেলেন, তাহলেই তাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়টি ‘বিশ্বাসযোগ্য হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়াল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? আমি জানি, ঈদের আগে দেখি, বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
কিছুদিন ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে একটি প্রচার চলছে, যাতে সমর্থন দিচ্ছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। গত সপ্তাহে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে দলের সমর্থন জানিয়ে তার গায়ে থাকা কাশ্মীরি শাল আগুনে ছুড়ে ফেলেন।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা পরে দাবি করেন, এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়নি। রিজভী এই কাজ করবেন, সেটাও জানা ছিল না তাদের। তবে সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশেও ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে ব্যানার দেখা যায়। এ প্রসঙ্গ ধরে গতকাল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা ছাড়া তারা খেতে পারবে কি না, এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।”
একাত্তরে ২৫ মার্চের রাতে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেই ‘আক্রমণকারীদের একজন’ ছিলেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে (ঢাকায়) গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। যারা জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান। সেই সময় যারা ব্যারিকেড দিয়েছে, জিয়াউর রহমানও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে আক্রমণ চালায়, সেই আক্রমণকারী একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আজকের যে দলটি বড় বড় কথা বলে যে, ‘২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে।’ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল, শুধু যুদ্ধ পরিচালনা নয়, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়। একেকটা সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া রহমানের জš§ কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হয়, তখন তারা কিন্তু পূর্ব বাংলায় আসেনি, তারা করাচিতে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেখানে পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে কার্যাদেশ করে সামরিক অফিসার হিসাবে পূর্ব বাংলায় এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার মনে তো পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছরের মধ্যে যে ২৯ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল, সেই সময়টাকে ‘জাতির দুর্ভাগ্যের বছর’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশটি পরাধীন, এদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেয়া একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারীর জন্য সম্ভব। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির পালা দেখেছি।’
বিএনপি নেতা ‘মঈন খানের বাবার কারণে’ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলেও মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ’৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখন খাদ্য সচিব ছিল মঈন খানের বাবা মোমিন খান। সে ছিল খাদ্য সচিব। জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে খাবার আসতে দেয়নি বাংলাদেশে, দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যার কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করল। এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা করল, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এরপরে দল গঠন। আজকে রাজনৈতিক দল করে অনেক বড় বড় কথা বলে।’
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ সভায় বক্তব্য দেন।