নীতিমালা অনুসরণে অনাগ্রহী হচ্ছে শাখা

বিএফআইইউ’র ব্যাংক পরিদর্শন কমছে ধারাবাহিকভাবে

শেখ আবু তালেব: অর্থ পাচার রোধে কর্মরত দেশের একমাত্র আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটি অর্থপাচার রোধে ব্যাংকগুলোকে গাইডলাইন অনুসরণের বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরেই সংস্থাটির ব্যাংক পরিদর্শন কমে যাচ্ছে। এতে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে মান অবনতি হওয়া ব্যাংক শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। অবশ্য বিএফআইইউ এজন্য জনবল স্বল্পতাকে দায়ী করছে। এর ফলে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন-বিষয়ক নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। যদিও গত কয়েক বছর ধরেই জনবল বাড়ছে এ খাতে।

জানা গেছে, বিএফআইইউ অনসাইট ও অফসাইট দুই পদ্ধতিতেই ব্যাংকগুলোর তথ্য পর্যালোচনা ও পরিদর্শন কার্যক্রম করে থাকে। এর বাইরেও সিস্টেম চেক ইন্সপেকশন করে থাকে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৬টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিস্টেম চেক ইন্সপেকশন করেছিল বিএফআইইউ। একই সময়ে ২১৩টি ব্যাংক শাখা পরিদর্শন করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কোনো ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম চালায়নি, অবশ্য ৫৬ ব্যাংক শাখা পরিদর্শন করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৭টির প্রধান কার্যালয় ও ৫৭টির শাখা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৬টি প্রধান কার্যালয় ও ৫৪টি শাখায় পরিদর্শন করে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিদর্শন কার্যক্রম আরও কমে যায়। এ সময়ে প্রধান কার্যালয়ের শাখা মাত্র ২৩টি ও ৪৯টি শাখা পরিদর্শন করে।

জানা গেছে, মুদ্রা পাচার রোধে বিএফআইইউ একটি গাইডলাইন দিয়েছে। এটি পরিপালন করতে প্রতি ব্যাংক ক্যামেলকো কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। এই কর্মকর্তাই ব্যাংকের বিষয়টি দেখভাল করেন। ব্যাংকগুলোকে প্রতিমাসে সন্দেহজনক (এসটিআর) লেনদেন শনাক্ত করে বিএফআইইউকে অবহিত করতে হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করতে হয়।

সিস্টেম চেক পরিদর্শনের মাধ্যমে মূলত বিএফআইইউ পর্যবেক্ষণ করে ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে এসটিআর করছে কি না। এক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা শিথিলতা হচ্ছে কি না। এছাড়া স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী লেনদেন ও এসটিআর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে কি না প্রভৃতি। এর বাইরেও লেনদেন পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মকর্তার দক্ষতার মান প্রভৃতি নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে যাচাই করে থাকে।

এসব পরিদর্শনের ওপর প্রতি ব্যাংক ও শাখাগুলোকে মূল্যায়িত করা হয়। শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য, মার্জিনাল ও অসন্তোষজক এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এ মূল্যায়ন করা হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এটি কমে আসছে। এর প্রভাবও পড়েছে ব্যাংক ও শাখাগুলোর ওপর। বিএফআইইউর অফ-সাইট সুপারভিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে তথ্য সংগ্রহকারী ব্যাংক শাখার সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৩৩টি। এই সময়ে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে গাইড লাইন পরিপালনে শক্তিশালী শাখার সংখ্যা ছিল ৮৮টি। ২০১৯ সালের জুন শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৬৯টিতে। শক্তিশালী শাখার সংখ্যা কমে হয় মাত্র ৪৩টি। তিন বছরের ব্যবধানে শক্তিশালী থাকা শাখার সংখ্যা কমে অর্ধেকে নামে। অপরদিকে ২০১৬ সাল শেষে সন্তোষজনক শাখার সংখ্যা ছিল ২০১৬টি, ২০১৯ সালের জুন শেষে তা কমে হয় এক হাজার ৪৫২টি।

পরিদর্শন কমে আসার বিষয়টি অবশ্য স্বীকার করেন বিএফআইইউ প্রধান নির্বাহী আবু হেনা মুহা. রাজী হাসান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে পরিদর্শন কার্যক্রম কিছুটা কমেছে, কিন্তু গুরুত্ব কমেনি। আমরা আর্থিক খাতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করছি। এজন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করছি। আবার বর্তমানে জনবলের স্বল্পতাও পরিদর্শন কমে যাওয়ার কারণ।’

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উইং হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ)। এর জনবল ও অর্থ সংস্থান করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় বিএফআইইউ। এখনও এর জনবল, অফিস ও অর্থ সংস্থানের জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরে এ সংস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জনবল ছিল ৬০ জন। চলতি বছরে এ সংখ্যা ৮০ জনের ওপরে হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০