সাইফুল আলম: ১৯৫২ সালে বেসরকারি খাতে স্টিল রি-রোলিং মিল নির্মাণের মাধ্যমে দেশে ইস্পাতশিল্প যাত্রার সূচনা করে প্রতিষ্ঠানটি। সময়ের আবর্তে প্রতিষ্ঠানটি একটি সফল শিল্পগ্রুপে রূপান্তরিত হয় ১৬ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে। এ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত ইস্পাতের উৎপাদন ১৭ লাখ ২৭ মেট্রিক টনের অধিক, যা গ্রুপটিকে পরিণত করেছে দেশের ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে। এ উৎপাদন আগামী বছর বেড়ে হবে সাড়ে ২১ লাখ মেট্রিক টন। এতক্ষণ বলা হচ্ছে বিএসআরএম গ্রুপের কথা।
বিএসআরএম বাণিজ্যিকভাবে রড, চ্যানেল ও অ্যাঙ্গেল উৎপাদনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। সর্বদা সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট থাকে বলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে। ফলশ্রুতিতে শতভাগ কর্মক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে নিরাপদ জাতি গঠনে অংশীদার হতে পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, নতুন কাঁচপুর-মেঘনা-গোমতী সেতুর জন্য বিশেষায়িত রড সরবরাহ করছে বিএসআরএম। এর আগে চট্টগ্রাম-ঢাকা ডাবল রেললাইন প্রকল্প, হাতিরঝিলসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সফল অংশীদার ছিল গ্রুপটি। অবকাঠামো খাতে গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘মাক্সিমা, আল্ট্রিমা ও সেঞ্চুরা’ নামে নতুন রড উৎপাদনে মনোযোগী গ্রুপটি। এ ধরনের রড উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে উদীয়মান হচ্ছে। বর্তমান সরকারের নীতিমালা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে মানসম্পন্ন রডের চাহিদা বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প রডের চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি করবে। এ লক্ষ্যে গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসআরএম আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের (বিসকো) সঙ্গে একত্রীকরণের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হলে চার লাখ ৩০ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি বিলেট প্লান্ট নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এতে বিলেটের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল মূল্যের ঝুঁকি ও পরনির্ভরতা হ্রাস পাবে। নতুন বিলেট প্লান্ট নির্মাণ ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সঙ্গে একত্রিত হলে কোম্পানির উৎপাদন ও মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।
বিএসআরএম গ্রুপ শুধু মুনাফার জন্য ব্যবসা করে না। বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতাকে মূল ব্যবসার অংশ হিসেবে গণ্য করে বিএসআরএম তার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে। গ্রুপ কর্তৃক গৃহীত সর্বশেষ কিছু সিএসআর কার্যক্রম হলো চট্টগ্রামবাসীর জন্য বৃত্তিমূলক কারিগরি প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে শিক্ষার জন্য বুরহানি বিএসআরএম স্কুল নির্মাণ। মিরসরাইয়ে ঠোঁট ও তালুকাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসআরএম ফাউন্ডেশন মেডিক্যাল সেন্টার নির্মাণ ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন সংরক্ষণ প্রকল্পসহ আরও কিছু সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বিএসআরএম গ্রুপের সাফল্যের রূপকার ইস্পাতশিল্পের সফল ব্যক্তিত্ব আলী হুসেন আকবার আলী। তার মেধা ও প্রজ্ঞায় গ্রুপটি প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রুপটিতে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হুসেন। এছাড়া গ্রুপ পরিচালক হিসেবে রয়েছেন জোহার তাহের আলী ও তাহসিন তাহের আলী। প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর। ১০ হাজারেরও বেশি দক্ষ কর্মী রয়েছেন এখানে। ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও কর্মীবাহিনীর প্রচেষ্টায় অনেক অর্জন যুক্ত করেছে গ্রুপটি। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সমৃদ্ধি ও সম্ভানার দিকে এগিয়ে যাবে বিএসআরএম।
বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের সঙ্গে বিএসআরএম আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডকে একীভ‚তকরণে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা। কেননা আমরা যদি এটাকে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসতাম, তাহলে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করতে পারতাম। কিন্তু এ ধরনের ইচ্ছা ও আগ্রহ আমাদের নেই; ভবিষ্যতেও থাকবে না। দেশের নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে রডের চাহিদা রয়েছে। সে চাহিদা মেটাতে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে। এ বছর আমরা প্রথমবারের মতো ১০ লাখ টন রড উৎপাদনের ইতিহাস গড়েছি
আলী হুসেন আকবার আলী চেয়ারম্যান
আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিল ও বিএসআরএম স্টিল লিমিটেড গত ১৮ মাসে ১৭ লাখ ২৭ হাজার ১৮৮ টন রড উৎপাদন করেছে এবং বিক্রি হয়েছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার টন। আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফিউশন বন্ডেড ‘সেঞ্চুরা’ নামে নতুন পণ্য এনেছি। অ্যান্টি রাস্টিং ক্ষমতাসম্পন্ন এ রড উপক‚লীয় এলাকায় ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এ রড দিয়ে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে তা অন্য যে কোনো রডের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মেরামত খরচ বাঁচায়আমের আলী হুসেনগ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক
চট্টগ্রাম