মো. আসাদুজ্জামান নূর: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল বড় উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এক দিনেই সূচকে যোগ হয়েছে ১৫৫ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতন রক্ষার জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ এবং এক দিনে শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতনের সীমা ১০ শতাংশ থেকে দুই শতাংশে নামিয়ে আনার কারণেই এমন উত্থান দেখা গেল।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার দিন থেকে আট কর্মদিবসে ৩৮২ পয়েন্ট সূচকের পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক জেঁকে বসে। মঙ্গলবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় সূচক ১৩০ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়ে ফেলার পর হতাশা আরও গাঢ় হয়।
এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়। এ খবরে তলানি থেকে উঠে এসে দিন শেষ হয় ১৭ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। এ উত্থান এমন কোনো বড় কিছু না হলেও পরিস্থিতির কারণে সেটি বিনিয়োগকারীদের চিড় ধরানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
গতকাল বুধবার লেনদেনের শুরুই হয় ৫৭ পয়েন্ট যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বাড়ে ১১৩ পয়েন্ট। এরপর পৌনে এক ঘণ্টা কিছুটা কমলেও পরে সময় যত গড়িয়েছে, শেয়ারগুলো তত হারানো দর ফিরে পেতে থাকে। লেনদেন শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৭৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর শেষ কয়েক মিনিটের সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত উত্থান হয় ১৫৫ পয়েন্ট।
উত্থানের এ দিনে বেড়েছে ৩৬৫টি কোম্পানির শেয়ারদর। এর মধ্যে ১৪টি কোম্পানির দর দিনের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের প্রায় কাছাকাছি বেড়েছে আরও চারটির দর। আরও ১৬টি কোম্পানির দর আট শতাংশের বেশি, ১৭টির দর সাত শতাংশের বেশি, ২২টির দর ছয় শতাংশের বেশি, ২৩টির দর পাঁচ শতাংশের বেশি, ৪৯টির দর বেড়েছে চার শতাংশের বেশি। কেবল দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর হারিয়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল। আর লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ব্র্যাক ব্যাংক দর হারিয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
প্রায় সব কোম্পানির দর বাড়ার দিনে একক কোম্পানি হিসেবে সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে ওয়ালটন। শেয়ারদর ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন, যার শেয়ারদর বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারদর ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ৫ দশমিক ৮ পয়েন্ট।
এছাড়া বার্জার পেইন্টস ৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট, রেনাটা ৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মা ৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড ২ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ার ২ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট ও রবির কারণে ২ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট সূচক বেড়েছে।
সূচক ব্যাপকভাবে বাড়লেও লেনদেন তলানিতেই রয়েছে। ৭৭৩ কোটি এক লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৭৪৬ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে টানা ৯ দিন লেনদেন হলো এক হাজার কোটি টাকার নিচে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাপক দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের টাকা আটকে গেছে। তিন দিন আগে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের মধ্যে আজ যাদের মুনাফা হয়েছে, তারাই দাম বাড়ার সুযোগ নিয়েছেন। ফলে বাড়তি দামেও বিক্রেতা ছিল কম।
খাতভিত্তিক লেনদেনে সবার ওপরে ছিল বস্ত্র খাত। খাতটিতে ১৩ শতাংশের বেশি লেনদেন হয়েছে। এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১২, বিবিধ ১০, প্রকৌশল ১০ ও ব্যাংক খাতে সাত শতাংশের বেশি লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন সাত শতাংশের নিচে ছিল।