আয়নাল হোসেন: খাদ্যদ্রব্য, বিভিন্ন পণ্যে সেবা ও ভেজালের মাত্রা দেশে বাড়লেও জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) তদারকি কার্যক্রম দুর্বল হচ্ছে। বিগত চার বছর তিন মাসে বিএসটিআই কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সংখ্যা, জরিমানার পরিমাণ ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এই চিত্র ফুটে ওঠে।
বিগত চার বছর তিন মাসে জরিমানাকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে ৮১ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট এক হাজার ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমে হয় ৮৯৮টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমে হয় ৩৯৮টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমে হয় ৩৭৪টি ও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানাকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১৩টি।তবে বিগত চার বছর তিন মাসে বিএসটিআই খাদ্যদ্রব্য ও বিভিন্ন পণ্যে ভেজাল ও মানহীন শনাক্ত হওয়ায় ১৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় ৯৮টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিএসটিআই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭৮১টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৬৪৫টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও কমে হয় ৩৪৬টি, তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামান্য বেড়ে ৪২৪টি হলেও চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। বিগত পাঁচ বছরে মামলা দায়েরের সংখ্যাও কয়েকগুণ কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মামলা হয়েছে এক হাজার ৬২টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯১০টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৯৫টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৭০টি ও চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৮টি। বিএসটিআইয়ের অভিযানে দেখা গেছে, অনুমোদনবিহীন পণ্য উৎপাদন করায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিগত চার বছর তিন মাসে জরিমানার পরিমাণও কমে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জরিমানা করা হয়েছে প্রায় চার কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে হয় প্রায় চার কোটি তিন লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমে হয় দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক কোটি প্রায় ১৮ লাখ টাকা।
বিএসটিআই বলছে, গত মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের আক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানা সমস্যার মধ্যেও আজ বুধবার পালিত হচ্ছে ৫১তম বিশ্ব মান দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রটেকটিং দ্য প্লানেট উইথ স্ট্যান্ডার্ড’। এটির বাংলা অর্থে দাঁড়ায় ‘পৃথিবী সুরক্ষায় মান’। পণ্য ও সেবার মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও), ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রোটেকনিক্যাল কমিশন (আইইসি) ও ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) প্রধানরা বাণী দিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) সাজ্জাদুল বারী শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনাভাইরাস থাকা সত্ত্বেও রেকর্ড প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও জরিমানা করা হয়েছে, যা বিগত এক বছরেও সম্ভব হয়নি। গত তিন মাসে ৪১টি অভিযানে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। আর এতে জরিমানা করা হয়েছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে জাতীয় মান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিএসটিআই’র প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলোয় আলোচনা সভাসহ প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশেষ সাক্ষাৎকারভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং বাংলাদেশ বেতারে আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে।