সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বছরের প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানি পণ্য বিক্রয় করে। এর মধ্যে ৪০ লাখ টন হলো ডিজেল। অথচ এ জ্বালানি পণ্যের মান সনদ নেই। শুধু তাই নয়, বিপিসির বিক্রীত অকটেন, পেট্রোল, জেট ফুয়েল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল ইত্যাদিরও মান সনদ নেই।
যদিও বাজারে সরবরাহ করা বিপিসির তেলের মান সন্দেহ প্রকাশ করেন ভোক্তা ও ব্যবহারকারীরা। এতে ক্রেতা ও ব্যবহারকারীরা নিয়মিত ঠকছেন। রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী সংস্থার এমন আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সচেতন নাগরিকরা।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, জেট ফুয়েল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েলসহ মোট ১৩টি জ্বালানি পণ্যের মোট বিক্রি ছিল ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এর বাজারমূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অপরিশোধিত ক্রুড আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৫১ লাখ মেট্রিক টন ও পরিশোধিত তেল আমদানি ৪০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু পরিশোধিত বা অপরিশোধিত কোনো পেট্রোলিয়াম পণ্যের একটিরও মান যাচাই করা হয়নি। আর এভাবে বছরের পর বছর ধরে মান সনদ ছাড়াই তেল বিক্রয় করছে বিপিসি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সূত্রে জানা যায়, কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলো থেকে জ্বালানি নেয়ার ক্ষেত্রে অকটেনের আরওএন মান ন্যূনতম ৯৫, পেট্রোলের আরওএন মান ৮৭, ডিজেলের সিটান মান ৪৬ ও কেরোসিনের মান হবে ৩৫। আর এ মানের বেসরকারি রিফাইনারিগুলোতে জ্বালানি পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। ফলে গত বছরের ১ জুলাই থেকে বন্ধ আছে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
এদিকে জ্বালানি তেল ব্যবহারকারীদের ভাষ্য, সারাদেশে প্রায় দুই হাজার ৬০০টি পেট্রোল পাম্প আছে। এসব পাম্পে মানহীন জ্বালানি তেল বাজারজাত করছে বিপিসি। বাধ্যবাধকতা থাকলেও পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের মান সনদ গ্রহণ করছে না সংস্থাটি। মান সনদ নিলে নিশ্চিত হতো জ্বালানির মান। কিন্তু মান নিশ্চিত করার জন্য আগ্রহ নেই বিপিসির। এতে জনসাধারণ, বিশেষত গাড়ি ব্যবহারকারী ও কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর একটি সরকারি সংস্থা হয়ে কীভাবে বছরের পর বছর জনগণকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।
এ বিষয়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিপিসির সরবরাহকৃত ফার্নেস অয়েলের মান ভালো নয়। তাই আমরা সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করি। এতে আমাদের তেলের মানও ভালো হয়। পাশাপাশি কিছুটা সাশ্রয় হয়।’
যদিও তেলের মান চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম গত বছরের ২ জানুয়ারি একটি রিট করেছিলেন। আর রিটটি আমলে নিয়ে বাজারে বিপণন করা জ্বালানির (ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল) মান পরীক্ষা করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিএসটিআইয়ের প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (সিএম) মৃণাল কান্তি বিশ্বাস শেয়ার বিজকে বলেন, বিপিসির পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের মান পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ডিজেলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাকি অকটেন ও পেট্রোলের পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন আছে। বিপিসি মান সনদের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু তারা এখনও ফি জমা দেয়নি। এ বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বহু আগে থেকে মান সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আর সংস্থাটির যেহেতু মান সনদ নেয়ার জন্য যেহেতু আবেদন করেছে, সেহেতু জরিমানা কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে বিসিপির আরও আগেই মান সনদ নেয়া উচিত ছিল।
জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (পরিচলন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, ‘আমরা ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের মান সনদের জন্য আবেদন করেছি। এর মধ্যে প্রথমে ডিজেলের মান সনদ নেয়া হবে। এক্ষেত্রে বিএসটিআইকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।’