Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:33 am

বিএসটিআই মানদণ্ডের হেলমেট বাধ্যতামূলক করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার নানা দিক নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এমন বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা এতে অংশ নেন।

ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। বিশেষ অতিথি বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বিএসটিআই মহাপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) আতিকুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।

বিএসটিআই মহাপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার মোটরচালিত যানবাহন চালকদের জন্য নিরাপদ গাড়িচালনার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের জন্য সচেতনতা কার্যক্রম, মোটরসাইকেল চালকদের জন্য হেলমেট আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ, লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা এবং বিএসটিআই মানদণ্ডের হেলমেট না পরা চালকদের জ্বালানি সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে। মোটরচালিত যানবাহন ও সড়ক অবকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে মোটরসাইকেল চালনা অনেক সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। আবার হেলমেট একেবারেই না পরা বা মানসম্মত হেলমেট না পরার কারণে দুর্ঘটনার ফলাফল মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিএসটিআই হেলমেটের

মানদণ্ড নির্ধারণ করার পরে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে কেউ যেন মানহীন হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে। 

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধের হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা এবং এ থেকে মৃত্যুর হার হ্রাস করা সম্ভব হয়নি এখনও। এ বছর প্রথম তিন মাসে ৯১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ১৪৭টিই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এই সময়কালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতি বছর সঠিক মানদণ্ডের হেলমেট পরার মতো সাধারণ কিছু সুরক্ষা পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি ঘটে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০২২-এর অক্টোবরে হেলমেট বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা মান বলবৎ করেছেন। এজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব হেলমেট পাওয়া যায় তার অধিকাংশই গুণগত মান ও সুরক্ষা, কোনো দিক থেকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না। আন্তর্জাতিক মোটরযান ফেডারেশন (এফআইএ), ব্র্যাক এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে হেলমেট বিষয়ে মানদণ্ড নির্ধারণ এবং এ বিষয়ে অ্যাডভোকেসি করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে বিশ্বব্যাংক।’

সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জানিক পরামর্শক পিয়েরে ক্যাসটাইং বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার হেলমেটের নিরাপত্তা মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন ও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য এ হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইনও প্রণয়ন করেছে। এখন এই আইনের কার্যকর প্রয়োগে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কাজটি করা যেতে পারে দেশে মানসম্মত নয় এমন হেলমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং আমদানিকারক, ডিলার ও ব্যবহারকারী এ তিন পর্যায়ে এ আইন কার্যকর করার মাধ্যমে।’

ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন বলেন, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, পাশাপাশি চালকরা মানসম্মত হেলমেট পরছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণে বিশেষ করে মহানগর ও মহাসড়কগুলোতে ক্যামেরাও বসাতে হবে। আইন মেনে চলা এবং আইনের প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। জনসাধারণ যখন আইন মানার সুবিধা উপলব্ধি করেন তখন নিজেরাই তা মেনে চলতে উৎসাহী হন।’

বিশ্বব্যাংকের কর্মসূচি সমন্বয়ক দিলশাদ দোসানি উপসংহারমূলক বক্তব্যে বক্তাদের তুলে ধরা সুপারিশগুলোর সারমর্ম উপস্থিত করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হেলমেট বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা মানদণ্ড বাস্তবায়নে সরকার ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এ কমিটি একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে যার আওতায় আইনটির বাস্তবায়নে একটি কর্মপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হবে। কোথায় কয়টি টেস্টিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে, আইন প্রয়োগে পুলিশের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা, চালকদের সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত হেলমেট কবে থেকে বাজারে পাওয়া যাবে, সাধারণ মানুষের জন্য এ বিষয়ে জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিকল্পনা, মোটরসাইকেল হেলমেটের জন্য সার্টিফিকেশন ও ব্যবহার বিষয়ে জাতীয় আইনকাঠামো কবে ও কীভাবে হালনাগাদ করা হবে। এসব বিষয় এই রোডম্যাপের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

আলোচনা শেষে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাঝে ‘ইউএন স্ট্যান্ডার্ড’ হেলমেট বিতরণ করা হয়।

সপ্তমবারের মতো এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ। এ বছর এই উদযাপনের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে ১৫ থেকে ২১ মে সময়কালের সপ্তাহটিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এ ক্যাম্পেইনে হ্যাশট্যাগ রিথিঙ্ক মবিলিটি (#জবঃযরহশগড়নরষরঃু), হ্যাশট্যাগ স্ট্রিটস ফর লাইফ (#ঝঃৎববঃংভড়ৎখরভব), হ্যাশট্যাগ রোড সেফটি (#জড়ধফঝধভবঃু)  ব্যবহার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ আহত হয়। আহতদের অনেকে স্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। পৃথিবীর মোট যানবাহনের প্রায় ৬০ ভাগ রয়েছে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, আর দুর্ঘটনার ৯৩ শতাংশই ঘটে এসব দেশে।