Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:20 pm

বিএসটিআই সনদ বাধ্যতামূলক চায় বাংলাদেশ চেম্বার

জাকারিয়া পলাশ: রান্নাঘর ও ডাইনিংয়ে ব্যবহৃত সব ধরনের প্লাস্টিকপণ্যই দেশের কোম্পানিগুলোতে উৎপাদিত হয়। তবুও এসব পণ্য আমদানি হচ্ছে ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। বাজারে ছাড়ার আগে দেশিপণ্যকে মান যাচাইয়ের পরীক্ষা মোকাবিলা করে, বিএসটিআই’র সনদ নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু বিদেশি পণ্যগুলো কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই ঢুকে পড়ছে বাজারে। এছাড়া এসব প্লাস্টিকপণ্যের চেয়ে তাদের কাঁচামাল আমদানিতে বেশি শুল্ক থাকায় দেশি কোম্পানিগুলো সমস্যায় পড়ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিদেশে উৎপাদিত ওইসব পণ্যের পর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপের সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে দেশের বাজারে এসব পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিও করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেওয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) বাজেট প্রস্তাবে এ সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, স্থানীয় উৎপাদকরা পণ্য বাজারজাত করতে গেলে বিএসটিআইয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। কিন্তু আমদানি পর্যায়ে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিল ও কিচেনওয়্যার অত্যন্ত নি¤œমানের পাতলা ও হালকাপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। এসব পণ্যের এইচএস কোড হচ্ছে ৩৯.২৪।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিকৃত সিরামিক পণ্য ছাড় করার আগে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে মান নিশ্চিত করা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক খাতে সেটি করা হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমদানিকৃত প্লাস্টিক পণ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা দেশি শিল্পের জন্য জরুরি। কিন্তু উš§ুক্ত বাজার ব্যবস্থায় আমরা বিদেশি পণ্যকে নিষিদ্ধ করতে পারব না। তবে দেশের বিএসটিআইয়ের মান নিশ্চিত করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিত।’

এদিকে বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নি¤œমানের এসব পণ্য আমদানির নামে মূল্যের মিথ্যা ঘোষণা (আন্ডার ইনভয়েস) দেওয়া হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে আন্ডার ভয়েস প্রতিরোধের জন্যও ৩৯.২৪ এইচএস কোডভুক্ত সব পণ্যে সিরামিক পণ্যের অনুসরণে বিএসটিআই’র মান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়।

সূত্রমতে, ৩৯.২৪ এইচএস কোডভুক্ত প্লাস্টিক পণ্যগুলো তৈরিতে মৌলিক উপকরণ হলো মেলামাইন মৌল্ডিং কম্পাউন্ড (এইচএস কোড ৩৯০৯.২০.১০)। এর আমদানি মূল্য টনপ্রতি এক হাজার ৭৫০ ডলার বা এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসেবে)। অপর একটি কাঁচামাল হলো ডিক্যালকোমানিয়া পেপার (এইচএস কোড ৪৮১১.৯০.১১)। এটির আমদানি মূল্য টনপ্রতি দুই হাজার ৫৫০ ডলার বা দুই লাখ ৯ হাজার টাকা। এছাড়া উভয় কাঁচামালে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।

অন্যদিকে এসব কাঁচামাল দিয়েই উৎপাদিত পণ্যগুলো যখন বিদেশ থেকে আমদানি হয় তার মূল্য দেখা যায় অনেক কম। সূত্রমতে, ৩৯.২৪ এইচএস কোড শ্রেণির পণ্য অর্থাৎ মেলামাইন কাটিং বোর্ড প্রতি কেজি ২১৭ টাকা, ফ্রেশ বক্স প্রতি কেজি ৯৮ টাকা, ট্রে সেট ও টিফিন বক্স প্রতি কেজি ১০৭ টাকা এবং জগ প্রতি কেজি ১০৩ টাকা বিক্রি হয়, যা তুলনামূলকভাবে কাঁচামালের চেয়ে কম। এতে করে দেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশাপাশি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে।

এ পরিস্থিতি এড়াতে আমদানি পর্যায়ে টেবিল ও কিচেন ওয়্যার শ্রেণির পণ্যগুলোর বিএসটিআই মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া প্রতি কেজিতে সাড়ে ছয় ডলার ট্যারিফ নির্ধারণেরও প্রস্তাব করা হয় বিসিআই’র বাজেট প্রস্তাবে।