বেনাপোল স্থলবন্দরের কাস্টমসের কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের কারণে ভারতের সঙ্গে ওই বন্দর দিয়ে দু’দিন ধরে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে দু’পাশে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। এসব ট্রাকের কতগুলোতে পচনশীল পণ্য রয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু যেগুলোতে রয়েছে, সেসব পণ্য ব্যবহার হয়তো সম্ভব হবে না। এতে একদিকে ব্যবসায়ীরা পণ্য ব্যবহারের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি অনাকাক্সিক্ষত দেরির জন্য বাড়তি পরিবহন খরচও বহন করতে হবে তাদের। ব্যবসায়ীরা কি এ ক্ষতি মেনে নেবেন? তারা হয়তো পরোক্ষভাবে কিংবা পরবর্তী চালানে ভিন্ন কোনো উপায়ে পুষিয়ে নেবেন এটা। প্রকৃতপক্ষে এসব ক্ষতির দায় পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকেই।
বন্দর পরিচালনায় ডিজিটাইজেশন অবশ্যই সুখবর। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বন্দর পরিচালনাসহ সবক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশন খুব দরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন করা গেলে তা একদিকে সময় ও পরিচালন ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে, তেমনি সব কর্মকাণ্ড সুচারুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে। সুতরাং বেনাপোল স্থলবন্দরের সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন অবশ্যই একটি সময়োপযোগী কাজ। তবে কাজটি যদি আগে থেকে দিন-তারিখ ঠিক করে করা হতো, তাহলে ব্যবসায়ীদের অসুবিধা পোহাতে হতো না আর পণ্য পরিবহনে সমস্যা পোহাতে হতো না। সাধারণত বড় ধরনের আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ছুটির দিনগুলোতে কাজ হয়। অনেক সফটওয়্যারই আপগ্রেড হতে একাধিক দিন সময় নেয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগে থেকেই নোটিশ দিয়ে এবং ছুটির দিন সামনে রেখে আপগ্রেড করা উচিত। তাতে ভোগান্তি কমে। ব্যবসায়ীরাও বন্ধের আগেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে রাখতে পারেন এবং আপগ্রেডেশনের সময়ে অন্তত পচনশীল পণ্য আনা-নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে, এমন বন্দরগুলোর মধ্যে বেনাপোল সবচেয়ে বেশি সচল। এ বন্দর একদিন বন্ধ থাকা মানে প্রভূত ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া। এসব ক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা কিন্তু নয়; সার্বিকভাবে দেশও ক্ষতির মুখোমুখি হয়। ফলে বিকল্প রেখে ডিজিটাইজেশন কাজগুলো করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনে অ্যানালগ পদ্ধতিতে রেকর্ড রেখে পরবর্তী সময়ে তা সিস্টেমে ইনপুট করা যেতে পারে। আমরা অবশ্যই জানি, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কাজ হলে ব্যবসায়ী ও দেশ উভয়েই সুবিধা পায়। সুতরাং দেশের সার্বিক সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ডিজিটাইজেশনের যেমন বিকল্প নেই, পাশাপাশি তাৎক্ষণিক ক্ষতির বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করা উচিত। বেনাপোল স্থলবন্দরের মতো দেশের সব বন্দরেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে উঠুক এবং সেগুলো শুরু থেকেই ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে উঠুক। উন্নত সেবার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থার বিকল্প নেই।