নিজস্ব প্রতিবেদক: হুন্ডি প্রতিরোধে বিকাশে ক্যাশ আউট (অর্থ উত্তোলন) বন্ধের দাবী জানিয়েছে ব্যাংকাররা। দেশের শীর্ষ ২০ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বৈঠকে তারা এ দাবী জানায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দাবি প্রতি অসম্মতি জানিয়েছেন। ব্যাংকটি এখনই বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
গতকাল রোববার দেশের শীর্ষ ২০ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। যার প্রভাবে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে প্রবাসী আয় রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিত পতনে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শীর্ষ ২০ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে দেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্যাংকাররা হুন্ডিতে অবৈধ উপায়ে অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ করতে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন (ক্যাশ আউট) বন্ধ করার দাবী তুলেছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না। কারণ, বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধে বিদেশে দূতাবাসগুলো সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করছে। এছাড়া বৈধপথে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও প্রবাসী আয় না বাড়লে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস. কে. সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বসেছিলাম। তারা দাবি করেছেন, যেহেতু হুন্ডির মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশকে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন-সেহেতু বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু এধরনের দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মতি দেয়নি। বিকল্প হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে যেটা ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের বড় অবদান রয়েছে। এর ইতিবাচক ধারা যেন অব্যাহত হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় রয়েছে। এলক্ষ্যে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অ্যাপস্ তৈরি করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিকাশ এতোদিন এ অভিযোগ অ¯^ীকার করলেও দূতাবাসগুলোর নজরদারিতে এর সত্যতা মিলেছে। এই ধরনের কাজে সম্পৃক্ত থাকায় ইতোমধ্যে ২৫ জনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমানে ছোট অঙ্কের টাকা পাঠাতে কেউ আর ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছেন না। তারা খুব সহজে ¯^ল্প সময়ে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যয় ফ্রি করা যায় কি-না বা ব্যাংকগুলো যেসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে-তাদের চার্জ বেশি কি-না, এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাবিনিময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অনেকসময় দর কম থাকে। এতে প্রবাসী কম আগ্রহ দেখায়। এ পরিস্থিতিতে ¯^ল্প অঙ্কের রেমিটারদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি-না, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ডেপুটি গভর্নর সুর চৌধুরী বলেন, কোনো ব্যাংক ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্সে বিনিময়মূল্য নির্ধারণে বিশেষ প্রণোদনা দিতে চায়, তাদের অতিরিক্ত সেই ব্যয় সমš^য়ে যা খরচ হবে- তা ব্যাংকের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সবগুলো ব্যাংক মিলে অভিন্ন নেটওয়ার্ক স্থাপনে বিকাশকে ব্যবহারের প্রস্তাব উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিত পতনে কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। যাতে কোনোভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
রেমিট্যান্সের তর্থ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি’১৭) ৬২২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরে একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৩৩ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের সাত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১১১ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।