রহমত রহমান: অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে যেকোনো ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান যেকোনো জায়গায় বসে যেকোনো সময় ভ্যাট পরিশোধ করতে পারছেন। সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন ই-চালান। প্রাথমিকভাবে তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হলেও নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ১৫টি ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংক লেনদেন মুঠোফোনে চলে এসেছে। ফলে ভ্যাট প্রদান আরও সহজ করতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাট নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো ছয়টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট পরিশোধে যুক্ত করা হচ্ছে। ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন থেকে যোগাযোগ ও আলোচনা করা হচ্ছে। চুক্তি শেষে আগামী মাসে ১৫টি ব্যাংক ও ছয়টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধে যুক্ত হবে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১৬ জুলাই তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট কার্যক্রম চালু করা হয়। এর মাধ্যমে করদাতা যেকোনো জায়গায় বসে ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেম ব্যবহার করে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করতে পারবে। এলটিইউসহ ১২টি কমিশনারেটের করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করতে পারছে। জুলাই মাসে এলটিইউসহ ১২টি কমিশনারেটে ৪৬ হাজার ৩৮২টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন (দাখিলপত্র) জমা দিয়েছে। জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮০২টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে ই-পেমেন্টে ১৫টি ব্যাংককে যুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে ভ্যাট অনলাইন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এ চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন কার্যক্রমকে সফল ও ব্যবসাবান্ধব করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ১৬ জুলাই ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। প্রাথমিকভাবে এইচএসবিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা পাইলটিং করা হয়েছে এবং সফলভাবে চালু হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির শর্তানুযায়ী, ই-পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় এলটিইউ’র ৯০ শতাংশ ট্যাক্সপেয়ারকে আনা সম্ভব হলে চার দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় হবে। এরই মধ্যে যে তিনটি ব্যাংককে ই-পেমেন্টের আওতায় আনা হয়েছে, তাতে ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ এলটিইউ ট্যাক্সপেয়ার ই-পেমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডকে ই-পেমেন্টের আওতায় আনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। এ দুটি ব্যাংককে আনা সম্ভব হলে ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ এলটিইউ ট্যাক্সপেয়ারকে ই-পেমেন্টের নেটে আনা সম্ভব হবে।
চিঠিতে বলা হয়, ৯০ শতাংশ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ১৩টি ব্যাংককে ই-পেমেন্টের আওতায় আনা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলো হলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক এনএ, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবি)। আগস্টের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে ই-পেমেন্টের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ ব্যাংকগুলোকে ই-পেমেন্টের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠিতে গর্ভনরকে অনুরোধ করা হয়।
ভ্যাট অনলাইন সূত্র জানায়, ভ্যাট অনলাইন থেকে যেসব ব্যাংককের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, সব ব্যাংকের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম রয়েছে। কারণ ভ্যাটের টাকা ই-পেমেন্টের পরিশোধ মূলত অনলাইনভিত্তিক। চিঠি পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংককে বিষয়টি জানিয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংকের সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ও আলোচনা হয়েছে। সহসাই চুক্তি হয়ে যাবে। চুক্তি হলে আগামী মাস থেকে ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের তিনটিসহ মোট ১৮টি ব্যাংকের ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে পারবে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংককে ই-পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া যেকোনো ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি ২৮টি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে পারছে। ক্রেডিট কার্ডের লিমিট অনুযায়ী ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা যাবে।
সূত্র আরও জানায়, ১৭ জুলাই প্রাথমিকভাবে তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট মডিউল চালু করা হয়। এর পর থেকে করদাতারা ভ্যাট-সংক্রান্ত সব কর (ভ্যাট, টার্নওভার কর, সম্পূরক শুল্ক, জরিমানা ও সুদ) ই-পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে পরিশোধ করতে পারছেন। এলটিইউসহ ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ গ্রহণ করছে। দু-তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ হচ্ছে। সময়সাশ্রয়ী ও ভোগান্তিহীন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো সাড়া দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বর্তমানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সময়সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও গ্রাহকবান্ধব হওয়ায় মানুষ এতে লেনদেন করছেন। এছাড়া দেশের সব জায়গায় এ লেনদেন ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকের ই-পেমেন্ট সিস্টেমের চালু করার মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট আহরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। ভ্যাট পরিশোধ আরও সহজ করার অংশ হিসেবে বিকাশ, রকেট, নগদ, শিউরক্যাশ, ইউপেসহ ছয়টি এমএফএস সার্ভিসকে যুক্ত করা হচ্ছে। ব্যাংকের ই-পেমেন্টের মতোই ভ্যাট পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাটদাতার মোবাইলে একটি ই-চালান চলে আসছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে একটি সীমা (লিমিট) দেওয়া থাকে। সেজন্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রথম অবস্থায় শুধু ভ্যাটের টাকা নেওয়া হবে, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক নেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ভ্যাট আহরণ সহজ করতে তিনটি ব্যাংক দিয়ে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। করদাতারা বেশ সাড়া দিচ্ছেন। আরও ১৫টি ব্যাংক যুক্ত হচ্ছে। আমরা এসব ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করছি। চুক্তি হয়ে যাবে। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে ১৮টি ব্যাংকের ই-পেমেন্টের মাধ্যমে করদাতারা ভ্যাটের টাকা জমা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাট প্রদান আরও সহজ করতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাট নেওয়া হবে। আমরা এরই মধ্যে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ছয়টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চুক্তি হলে আগামী মাসের মধ্যেই করদাতারা এ সুবিধা পাবেন। প্রাথমিকভাবে শুধু ভ্যাটের টাকা নেওয়া হবে।’