বিক্রয় গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় খান’স কিচেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বৃহত খাবার সরবরাহকারী (ক্যাটারিং সার্ভিস) প্রতিষ্ঠান খান’স কিচেন। দেশের বড় বড় শিল্প কারখানা ও নানা অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির প্রসার ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর খান’স কিচেন এর দুইমাসে এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন এবং এর বিপরীতে ২৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সব বিক্রয় তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।

তিনি জানান, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল রাজধানীর বড় বেরাইদ খান’স হাউসে ১৪ ডিসেম্বর অভিযান পরিচালনা করে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক তানভীর আহমেদ এর নেতৃত্বে এ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। এতে গোয়েন্দারা বিপুল ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পান। ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র দুই মাসেই এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বিক্রয় হিসাব গোপনের তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার কাছে সামাজিক যোগাযোগে (ফেসবুকে) একজন গ্রাহকের সচিত্র অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযানটি করা হয়। অভিযোগটি বিভিন্ন সূত্রে যাচাই করে সত্যতা পাওয়ায় অভিযানটি করা হয়।

মহাপরিচালক জানান, অভিযানে গোয়েন্দারা ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে। এসব দলিলাদি প্রাথমিক যাচাইয়ে, এই খাবার সরবরাহকারীর প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভ্যাট চালানের পরিবর্তে ডুপ্লিকেট ও অবৈধ চালান ব্যবহার করে আসছে। এসব চালানে ভ্যাট আইন অনুসারে মূসক ৬.৩ ব্যবহার করা হয়নি।  

## দুই মাসে এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বিক্রয় গোপন, ভ্যাট ফাঁকি ২৩ লাখ টাকা

তল্লাশির এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির ক্লিপ ফাইলে দুই মাসের (২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) এর প্রকৃত বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তাদের মোট ৯৩ লাখ ৩ হাজার টাকার বিক্রয় হয়। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠান গুলশান ভ্যাট সার্কেলে প্রদত্ত দাখিলপত্রে ১৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। অর্থাৎ ওই মাসের দাখিলপত্রে ৭৩ লাখ ১০ হাজার টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। যার উপর পরিহারকৃত ভ্যাট ৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা প্রযোজ্য। 

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মোট ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠান দাখিলপত্রে ১৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। অর্থাৎ এই মাসের দাখিলপত্রে ৬৮ লাখ ৯১ হাজার টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। যার উপর পরিহারকৃত ভ্যাট ৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ এক লাখ ৯১ হাজার টাকা প্রযোজ্য।

ওই দুই মাসেই খান’স কিচেন এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে ১৭ লাখ ৮২ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। যার উপর ২ শতাংশ হারে সুদ ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকাসহ মোট ২২ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অন্যান্য মাসগুলোতেও অনুরূপ গরমিল দেখতে পেয়েছেন। ক্যাটারিং সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নিকট হতে জব্দকৃত ভ্যাট সংক্রান্ত সকল দলিলাদি যাচাই-বাচাই এবং প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার পর থেকে মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। ভ্যাট আইন পরিপালন না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ড. মইনুল খান।

###

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০