মো. আসাদুজ্জামান নূর: চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল পুঁজিবাজারে আবার পতন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৬৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। বাজার মূলধন কমেছে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ। পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯টির মধ্যে ১৬টি খাতের শেয়ারদর হ্রাস এবং সব খাতে বিক্রয় প্রবণতায় পুঁজিবাজারে আবার পতন ঘটেছে।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতকাল লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৮টির, কমেছে ২৭৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির। আর খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯টি খাতের মধ্যে মাত্র তিনটি খাতের শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে মূল্য হ্রাস পেয়েছে ১৬টি খাতের শেয়ার।
ট্যানারি ও আইটি খাতে ‘ক্রয় চাপের’ বিপরীতে সিমেন্ট ও সিরামিকস খাতে সর্বোচ্চ ‘বিক্রয় চাপ’ ছিল। এছাড়া ব্যাংক খাতে শূন্য দশমিক ১৪৪ শতাংশ বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। গতকাল লেনদেনের শুরুতে বিক্রেতাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। ক্রেতাদের চেয়ে বিক্রেতারা বেশি সক্রিয় ছিলেন। গতকাল বিনিয়োগকারীরা ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ার ছেড়ে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার কিনেছেন। এর প্রভাবে ‘এন’ ক্যাটেগরিতে ব্যাপক ‘বিক্রয় চাপ’ ও ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে ‘ক্রয় চাপ’ পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে দিনশেষে বিক্রেতাদের আধিপত্য ও বিক্রয় প্রবণতা বাজারে পতন ঘটায়।
গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৭৩টি কোম্পানির ২৩ কোটি চার লাখ ৭১ হাজার ৫৫৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ এক হাজার ১১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এতে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ব্যাংক খাতের। ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গতকাল এ খাতের অবদান ছিল ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, যদিও আগের কার্যদিবসে লেনদেন বেশি ছিল। বৃহস্পতিবার ১৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। গতকাল এ খাতের বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়। ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে বেড়েছে সাতটির ও অপরিবর্তিত ছিল আটটির।
এরপর সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১৬৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেন হয় বিবিধ খাতে। ১১টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে মাত্র দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা গেছে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার এ খাতের অবদান ছিল ৩৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
লেনদেনে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখে বস্ত্র খাত। ১৩৭ কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান ছিল ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ খাতের সর্বোচ্চ ৪০টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়। এর বিপরীতে মাত্র ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে পাঁচটির। আগের কার্যদিবসেও এ খাতের অবদান গতকালের চেয়ে বেশি ছিল। বৃহস্পতিবার ১৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অবদান ছিল ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয় ১৩১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। গতকাল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের অবদান বৃহস্পতিবার ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর হ্রাস পায় আটটির, বৃদ্ধি পায় ১০টির ও মাত্র একটির অপরিবর্তিত ছিল।
গতকাল লেনদেনের পঞ্চম অবস্থানে উঠে আসে খাদ্য খাত। গতকালও এ খাতের অবদান ১০ শতাংশের নিচে ছিল। ৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ছয় দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল চার দশমিক ৫৯ শতাংশ। গতকালের লেনদেনে ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে আটটির ও অপরিবর্তিত থাকে মাত্র দুটির।
এছাড়া প্রকৌশল খাত পাঁচ দশমিক ৯৪ শতাংশ, জ্বালানি চার দশমিক ৯৩ শতাংশ, আইটি তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন দশমিক ৫৪ শতাংশ ও সিমেন্ট খাত দুই দশমিক ৭৩ শতাংশ অবদান রাখে।
গতকাল ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৬৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৯৩০ দশমিক ০৭ পয়েন্টে, বিশেষ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ২৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৬৫৫ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ১২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে স্থির হতে দেখা গেছে।