নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয় দেশের উভয় পুঁজিবাজারের। এদিন পুঁজিবাজারের প্রধান প্রধান সূচক কমেছে। সেই সঙ্গে সূচকের সঙ্গে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দরও কমেছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। বাজার শুরুর দিকে সূচক ৭৫ পয়েন্ট বাড়লেও দিনশেষে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে সেটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। বিনিয়োগকারীদের এই শেয়ার বিক্রির চাপকে বাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকে মুনাফা সংগ্রহের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যে কারণে লেনদেনের সময় বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে মুনাফা সংগ্রহে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ে এবং বাজারে পতন ঘটে।
গতকাল পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩০৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক ১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪১০ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকার, যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪০৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার।
ডিএসইতে গতকাল ৩৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৫টির বা ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২১৭টির বা ৫৭ দশমিক ৮৭ শতাংশের এবং ৬৩টির বা ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৭৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮১ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৯৩টির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির দর। গতকাল সিএসইতে ৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু ইতিবাচক অবস্থার কারণে আগের সপ্তাহে বাজার ঊর্ধ্বমুখী গতিতে লেনদেন শেষ করেছে। এর মধ্যে বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। সেই আশাবাদ নিয়ে গতকাল বাজার শুরুর দিকে ইতিবাচক অবস্থায় থাকার কারণে সূচক ৭৫ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল। তবে সবার সেই আশাবাদ বাজারের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। লেনদেনের শেষের দিকে এসে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অনেক বেশি বিক্রির চাপের কারণে বাজারে খুব অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে; যা বাজারকে লেনদেন শেষে প্রথম দিকের সেই উত্থান থেকে পতনে নিয়ে গেছে।
তারা বলছেন, টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানে থাকার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বেশ ভালো মুনাফায় রয়েছে। এর মধ্যে বড় একটা অংশ রয়েছে, যারা বিনিয়োগ করে মুনাফা হলেই সেটা তুলে নিতে অস্থির হয়ে যান। যে কারণে শেয়ার কেনার পর থেকে দাম বেড়ে গেলেই বিক্রির জন্য যেদিন শেয়ার ম্যাচিউরড হয়, তার থেকে খুব বেশি আর অপেক্ষা করেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সূচক কমলেও লেনদেন বাড়ার কারণ হচ্ছে, অনেকে মুনাফা সংগ্রহ করেছেন। আর সেই কারণে শেয়ার বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয় এবং সূচক কমে। তবে আশা করা যাচ্ছে গতকাল বেশিরভাগ মুনাফা সংগ্রহ হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে আবারও বিনিয়োগ শুরু হবে এবং ভালো অবস্থানে যাবে বলে আশা করছেন তারা।