বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে ডিএসই নীরব থাকে কেন?

যখন একজন বিনিয়োগকারী বেশি শেয়ার কেনেন, তখন ডিএসই ও সিএসই থেকে বলা হয়, কেন এত শেয়ার কিনলেন। কিন্তু গত সোমবার শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি বেশি ছিল। এ বিষয়ে ডিএসই’র পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু তারা চুপ করে বসে থেকেছে। ক্রমাগত পতন হলে কিছু দেশ পুঁজিবাজারে কয়েক ঘণ্টার জন্য লেনদেন বন্ধ রেখে আবার চালু করে। এতে দেখা যায়, বাজার একটা ছন্দের মধ্যে চলে আসে এবং পতন কম হয়। কিন্তু ওইদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চুপ করে বসে থাকল কেন? যদি কিছুক্ষণের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখত, তাহলে ২৭৯ পয়েন্ট কমত না। বাজারের এত ক্ষতিও হতো না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী এবং এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও মাহবুব হোসেন মজুমদার।

ফজলুল বারী বলেন, ‘গত সোমবার করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই এক দিনে বড় ধরনের ধসের কবলে পরে দেশের পুঁজিবাজার। ওইদিন দিনশেষে ২৭৯ পয়েন্ট হারিয়ে বাজারে সূচক চার হাজার আট পয়েন্টে নেমে আসে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্রির চাপে বহু কোম্পানির শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। লেনদেনের পরিমাণও কমে যায়। কথা হচ্ছে, বিগত বছরের অনেক বিপর্যয়ের মধ্যে বাজার ভালো দেখা গেছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে এক দিনে বাজার কেন এত পতন হলো। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি, তবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। তাহলে কেন এত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আসলে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে কিছু সুবিধাভোগী লাভবান হচ্ছে। কারা এ শেয়ারগুলো কিনেছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর একটি কারসাজি আছে বলে মনে করি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্ত করে অন্তত একটি দৃশ্যমান শাস্তি দেন। যদি সেটা না করা যায় সে ক্ষেত্রে এ ধরনের কাজ চলতে থাকবে। এতে শুধু সুবিধাভোগী বা কারসাজিরা লাভবান হবে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে কে কারসাজি করছে, কখন কী ঘটছে এবং কোন ধরনের কোম্পানি বাজারে আসছে, এটার দেখার দায়িত্ব ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)। তাহলে গত সোমবার ডিএসই পরিচালকরা কী ভূমিকা পালন করল! দেখা যাচ্ছে বিশ্ব পুঁজিবাজারে সূচক পতন হচ্ছে, এ সুযোগে তারা দেশেও পতন ঘটাল। ক্রমাগত পতন হলে কিছু দেশের পুঁজিবাজার কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রেখে আবার চালু করে; তখন দেখা যায়, বাজার একটা ছন্দের মধ্যে চলে আসে এবং পতন কম হয়। কিন্তু ওইদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চুপ করে বসে থাকল কেন? যদি কিছুক্ষণের জন্য বাজার বন্ধ রাখত, তাহলে ২৭৯ পয়েন্ট কমত না। বাজারের এত ক্ষতিও হতো না। ২০০৯ ও ২০১০ সালে বাজার ধসের পর এই প্রথম বাজারে এরকম ধস হলো।’

মাহবুব হোসেন মজুমদার বলেন, ‘করোনার আতঙ্কে গত সোমবার পুঁজিবাজার রেকর্ড পরিমাণ ধস নামে। তবে এ পতনের পেছনে করোনোর চেয়ে বড় বিষয় ছিল বিনিয়োগকারীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ। এমনটাই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী অকারণে ভয় পান। যখনই কোনো ইস্যু আসে তখন আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। আর এ ইস্যুর সঙ্গে বাজারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা বিচার করেন না। এ কারণে গত সোমবার বাজারে ধস নামে। ওইসব বিনিয়োগকারী নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যখন একজন বিনিয়োগকারী বেশি শেয়ার  কেনেন, তখন ডিএসই ও সিএসই থেকে বলা হয়, কেন এত শেয়ার কিনলেন। কিন্তু গত সোমবার শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি বেশি ছিল। এ বিষয়ে ডিএসইর একটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারী এভাবে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হন।’

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০