ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান

বিক্রি হয়েছে ৩৩ লাখ, ভ্যাট অফিসে দেখাল ৩৩ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক মাসে বিক্রি হয়েছে ৩৩ লাখ টাকার ফার্নিচার। অথচ ব্যবসায়ী মাসিক রিটার্নে (দাখিলপত্র) দেখিয়েছেন ৩৩ হাজার টাকা। মূলত ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে রিটার্নে প্রকৃত বিক্রির তথ্য গোপন করা হয়েছে। জৈনপুর ফার্নিচার নামে একটি দোকানে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনার অজুহাতে দোকানে বিক্রি নেই বলে ভ্যাট সার্কেলকে জানিয়েছিলেন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। ‘ডাবল অ্যাকাউন্টিং’-এর পার্থক্যের এই চিত্র দেখে গোয়েন্দারাও বিস্মিত হন। কারণ ওই সময় করোনার ছোবলের আঘাত ছিল। একজন ক্রেতার দায়ের করা অভিযোগে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ২৮ ডিসেম্বর এই অভিযান করে। সংস্থার সহকারী পরিচালক মাহিদুল ইসলাম এতে নেতৃত্ব দেন। প্রতিষ্ঠানটি হলোÑজৈনপুর ফার্নিচার, ২১৭/৩, পশ্চিম কাফরুল, বেগম রোকেয়া সরণি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭।

মহাপরিচালক জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ দায়েরকারী বলেন, তিনি ওই দোকান থেকে ফার্নিচার কিনেছেন, কিন্তু তাকে ভুয়া ভ্যাট চালান দেয়া হয়। পরে তার সন্দেহ হলে তিনি ভ্যাট গোয়েন্দার কাছে অভিযোগ করেন। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, মিরপুরের রোকেয়া সরণিতে প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর গড়ে ওঠা সুদৃশ্য এই ফার্নিচারের দোকান বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। ওই দোকানের ভাড়া সাড়ে চার লাখ টাকা। শোরুমের ফার্নিচার অতি উন্নতমানের ও দামি ব্র্যান্ডের।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধিত হলেও ভুয়া ও ডুপ্লিকেট চালান ব্যবহার করে ফার্নিচার বিক্রি করছে। ভ্যাটের জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট সংরক্ষণ করছে। এতে স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে প্রকৃত বিক্রি গোপন রেখে নামমাত্র বিক্রির তথ্য ঘোষণা করছে। ফলে ক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না।

অভিযানকালে ফার্নিচারের দোকান থেকে ব্যবসায়ীর বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন গোয়েন্দারা। এতে দেখা যায়, কেবল চলতি বছরের মার্চ মাসে তাদের প্রকৃত বিক্রি ছিল ৩৩ লাখ টাকা। কিন্তু তারা মিরপুর সার্কেলে রিটার্নে দেখিয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার টাকা। অপ্রদর্শিত বিক্রি ৩২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এই বিক্রির হিসাব গোপন করার কারণে এক মাসেই ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। গোয়েন্দারা অন্যান্য মাসের অনুরূপ তথ্যও উদ্ঘাটন করেছেন। অনুসন্ধান করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, জৈনপুর ফার্নিচার মার্চ মাসে করোনার কারণ দেখিয়ে বিক্রি কম প্রদর্শন করেছে। অথচ ওই মাসে তাদের প্রকৃত বিক্রির প্রায় ৯৯ শতাংশ গোপন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যেই এই তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

অপরদিকে গোয়েন্দা দলটি একই এলাকার অন্য একটি ফার্নিচারের দোকানেও আকস্মিক পরিদর্শন ও অভিযান করে। এই প্রতিষ্ঠানেও হিসাব গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি হলোÑহোমউড ফার্নিচার, ৭৪৪, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। এই অভিযানে হোমউড ফার্নিচার থেকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের প্রকৃত বিক্রির তথ্য উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা তথ্যে দেখা যায়, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভ্যাট অফিসে বিক্রি দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ৬৪ হাজার টাকা। কিন্তু ওই দুই মাসে প্রকৃত বিক্রি হয়েছে চার লাখ ও ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ‘ডাবল অ্যাকাউন্টিং’-এর মাধ্যমে এই দুটো ফার্নিচারের প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত হওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গোয়েন্দা দল জব্দকৃত দলিলাদি আরও যাচাই করছে, একইসঙ্গে তাদের উভয়ের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। আরও তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ভ্যাট গোয়েন্দা।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০