Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 1:29 pm

বিক্রি হয়ে গেছে কাসেম গ্রুপের দুই কোম্পানির সম্পদ!

বিনিয়োগকারীদের কাছে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট মানেই পদে পদে ভোগান্তি। এতে একসময় কোম্পানির খোঁজ-খবর নেওয়া বন্ধ করেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরাও কোম্পানিগুলোর খোঁজ রাখেন না। যে কারণে সবার অগোচরে কোম্পানিগুলোতে চলে নানা অনিয়ম। তেমনই কিছু কোম্পানি পরিদর্শনকালে পাওয়া তথ্য নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজন। আজ ছাপা হচ্ছে ষষ্ঠ পর্ব

পলাশ শরিফ: কাসেম টেক্সটাইল ও কাসেম সিল্ক বস্ত্র খাতের নব্বইয়ের দশকের স্বনামখ্যাত কোম্পানি। মালিকানা নিয়ে টানাপড়েন ও লোকসানের জেরে ওই দুই কোম্পানিই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় এক দশক আগে ওই দুই কোম্পানির জমি-স্থাপনাসহ যাবতীয় সম্পদ অন্য ব্যবসায়িক গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাসেম টেক্সটাইলের ‘সাইনবোর্ড’ থাকলেও ‘কাসেম সিল্ক’-এর কোনো কিছুুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। তবে কোম্পানি দুটি হারিয়ে গেলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

কাসেম গ্রুপের দুই কোম্পানি হারিয়ে গেলেও এখনও ওটিসিতে তালিকাভুক্ত রয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানি দুটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরপর থেকে আর কোনো তথ্য মিলছে না। আর মালিকানা পরিবর্তন বা সম্পদ-অবকাঠামো বিক্রির বিষয়েও ডিএসইর দায়িত্বশীলরা আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। গত কয়েক বছরের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও ‘নিউজ আর্কাইভে’ নেই।

তথ্যমতে, কাসেম গ্রুপের উদ্যোক্তার অবর্তমানে ভাগ-বাটোয়ারার মুখে পড়ে গ্রুপটি। এ গ্রুপের অধীন কাসেম টেক্সটাইল ১৯৬৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে পথচলা শুরু করে। কোম্পানিটির কারখানা স্থাপন করা হয় রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে চালু ছিল কোম্পানিটি। মাত্র এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি ওই আর্থিক বছরে পাঁচ টাকা সাত পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২৫ টাকা ৩২ পয়সা ও ৭০ লাখ টাকা লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানিটির মোট ১৩ লাখ ৮০ হাজার শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৪৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে সবকিছুই এখন ‘কাগজে-কলমে’ রয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেনি কাসেম টেক্সটাইল।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে গাজীপুরের চান্দনায় কোম্পানিটির কারখানার মূল ফটকের সামনে ‘সাইনবোর্ড’ ছাড়া আর কোথাও কাসেম টেক্সটাইলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালের পর কোম্পানিটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির জমি-অবকাঠামো-যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু ‘গ্রুপ রিদিশা’ নামের ব্যবসায়িক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য কোহিনূর কেমিক্যালসের মালিকানাও ওই গ্রুপের হাতে রয়েছে। ২০১৫ সালে কাসেম টেক্সটাইল ‘গ্রুপ রিদিশা’র কাছে বিক্রি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেখানে গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘পিএ নিট কম্পোজিট লিমিটেড’র একটি ইউনিটের কার্যক্রম চলছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কারখানাটিকে এখনও ‘তিব্বত-কোহিনূর’ বলেই জানেন। তবে মালিকানা পরিবর্তন ইস্যুতে রিদিশা গ্রুপের দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গ্রুপটি একাধিক কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাসেম গ্রুপের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন।

কাসেম গ্রুপের কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব এটিএম জাহাঙ্গীর হাসনাত বলেন, ‘কাসেম টেক্সটাইলের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার কাছে শুধু কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্য রয়েছে। গ্রুপের অন্য কোম্পানির মালিকানা-ম্যানেজমেন্ট আলাদা।’ পরে ডিএসই ওয়েবসাইটে মোহাম্মদপুরের ঠিকানায়ও কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। সেখানে এখন আর মালিকপক্ষের কেউ থাকেন না বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে সত্তরের দশকে বাণিজ্যিকভাবে পথচলা শুরু করে কাসেম সিল্ক। টঙ্গীর বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে ১১২ থেকে ১১৫ নম্বর প্লটে কোম্পানিটির কারখানা স্থাপন করা হয়। ২০০০ সালে শেষবার লাভের মুখ দেখে কোম্পানিটি। লোকসানের কারণে এক যুগ পর ২০১১ সালে কাসেম সিল্কের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সরেজমিন পরিদর্শনকালে টঙ্গীর বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে ঘুরে কাসেম সিল্কের অস্তিত্ব¡ পাওয়া যায়নি।

ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ওই শিল্পনগরীতে ১১২ থেকে ১১৫ নম্বর প্লট কাসেম সিল্কের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই প্লটগুলোয় কাসেম সিল্কের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ওই তিনটি প্লট বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পরে ওই তিন প্লটে আলাউদ্দিন গ্রুপের আলাউদ্দিন অ্যান্ড সন্স (প্রা.) লিমিটেডসহ তিনটি পোশাক কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মাত্র দুই কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি পুঞ্জীভূত লোকসান আড়াই কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ শেয়ারপ্রতি দায় দুই টাকা ও ৩৩ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানিটির মোট ২০ লাখ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫০ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১২ সালে সর্বশেষ এজিএম করলেও এরপর থেকে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি।