প্রতিনিধি, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শনিবার রাতে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। রোববার দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করে দেয়াসহ ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের কাছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি সেøাগান দেন। তাদের হাতে ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ডও ছিল।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেনÑবিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুন (৪৫)। ঘটনার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অভিযুক্ত মামুন ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এলে তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে জিম্মি করেন অভিযুক্তরা। মামুন তার বাসায় রেখে আসা জিনিসপত্র জিম্মির স্ত্রীকে নিয়ে আসতে বলেন।
ওই নারী মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে এলে সেগুলো বুঝে নেন মামুন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাকে ‘স্বামী অন্য গেট (জঙ্গলের দিক) থেকে আসছেন’ বলে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
ওই নারী বলেন, ‘মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। (শনিবার) সন্ধ্যায় তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন করে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলেও জানান। এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। আমার স্বামী অন্যদিক থেকে আসছেন বলে আমাকে হলের পাশে জঙ্গলের নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল।’
এ ঘটনার পর অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার সকাল ৭টার দিকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শনিবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
হল থেকে অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতা করেছেনÑএমন অভিযোগে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেনÑবিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান।
এই তিনজনও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তবে আরেক অভিযুক্ত বহিরাগত মামুন (৪৫) পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করায় অভিযুক্ত মুরাদ ও শাহ পরান নামে আরও দুজন পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ‘সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। এর আগে রাতেই তাকে পালাতে সহযোগিতা করায় তিনজনকে আটক করা হয়।’