আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে রাজধানী কলম্বোর অধিকাংশ এলাকায় কারফিউ জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
কলোম্বো পুলিশের বরাত দিয়ে শনিবার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষুব্ধ শতশত মানুষ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চড়াও হওয়ার একদিন পরে শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাজাপাকসে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে এ উদ্যোগ নিলেন।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাচ্যুতির দাবিতে শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীকে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার এবং বিনাবিচারে দীর্ঘ সময় আটক করার অনুমতি দিয়ে কঠোর আইন কার্যকর করলেন রাজাপাকসে।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবনের কয়েকশ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এসময় তারা ওই বাসভবনের একটি সীমানা দেওয়াল ভাঙার চেষ্টার পাশাপাশি পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। বাসভবনের কাছে একটি বাসে আগুনও ধরিয়ে দেন তারা।
অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই টিয়ার শেল, লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপরই কলম্বোতে কারফিউ জারি করা হয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন রাজধানী পুলিশ বিভাগের সিনিয়র সুপারিটেনডেন্ট অমল এদিরিমান্নে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট, খাদ্য সংকট, প্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বী দামসহ নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকা পড়েছে শ্রীলঙ্কার মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য ঘাটতি দ্বিগুণ হয়ে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
গত মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া জুলাইয়ে বন্ড পরিশোধে ব্যয় হয় এক বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি দেশটির অর্থনীতি।
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ এলাকা ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে দেশটির বেশ কিছু হাসপাতাল সার্জারি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সড়কবাতিগুলোও জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যোরর উর্ধ্বগতি। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে শ্রীলঙ্কার সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে এবং এ বিষয়ে শিগগিরই দেশটির সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে আইএমএফ।
এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী পাভিত্রা ওয়ানিয়ারাচ্চি জানিয়েছেন, শনিবারের মধ্যেই ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ডিজেলের চালান আসছে শ্রীলঙ্কায়। তবে এই ডিজেল এলেই যে লোডশেডিং সম্পূর্ণ দূর হবে— ব্যাপারটি এমন নয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিক্ষোভ দমাতে শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি
