নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা ‘বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য’। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি ‘আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর’ হবে এবং জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূর হবে। গতকাল বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দেয়া বিদায় সংবর্ধনায় একথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির জীবনবৃত্তান্ত ও তার কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ তাকে সংবর্ধনা দেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার লিখিত বক্তব্যে মহামারির মধ্যে বিচার বিভাগ সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
এমনকি ঈদের ছুটিতে সর্বোচ্চ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ না রেখে আপিল বিভাগে ২৫০টি আপিলসহ ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির ঘটনাকে ‘বিরল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
পরে লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হল জনগণের আস্থা। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনি অন্যদিকে সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
দেশের বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরামর্শ দিয়ে মামলার জট নিয়েও বিদায় অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, এখনও বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ জনগণের প্রবল আস্থা রয়েছে। কিন্তু মামলার সংখ্যা বিবেচনায় বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল।
‘মামলার জট নিরসনে দেশের অধঃস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।’ বিচার বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা ‘বাঞ্ছনীয়’।
শারীরিক উপস্থিতির আদালতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল আদালত চালু রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যুগপৎভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করলে বিচার নিষ্পত্তি আরও দ্রুততর হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশঙ্কাস করি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের অবসরের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা কমে হচ্ছে চারজন। তারা হলেনÑবিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বিচারপতি ইমান আলী অবসরে যাবেন ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি নুরুজ্জামান ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।