নিজস্ব প্রতিবেদক: মুদ্রা পাচার মামলায় তারেক রহমানকে বেকসুর খালাসের রায় দেয়া বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল মামলাটি দায়ের করেছেন উপপরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদ। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মোতাহার হোসেন ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩-এর দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর সাবেক বিচারক।
ঘুষ হিসেবে ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন বিচারক মোতাহার হোসেন। সে সময় তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বিচারক মো. মোতাহার হোসেন তার নিজ নামে ও স্ত্রী তাসলিমা বেগম ওরফে আরজুমান্দ আরার (মৃত) নামে অর্জিত জমি বা স্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৯.৩২৯৯ একর বা ৯৩৩ শতক। যার দালিলিক মূল্য ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। স্থাবর সম্পদ ছাড়া মো. মোতাহার হোসেনের নিজ নামে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৬১ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৫ টাকা সম্পদসহ মোট ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। যার বিপরীতে ৪১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০ টাকার সম্পদের উৎসের প্রমাণ পাওয়া গেলেও ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কমিশন থেকে দুদক ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় মামলাটি অনুমোদন দিয়েছে।
সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞাও জারি করে কমিশন। তবে কমিশন অনুসন্ধান শুরু করার আগেই তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। ৮ বছরের অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিদেশের সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেতে মালয়েশিয়া ও লন্ডন সরকারের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিন্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছিল দুদক। কিন্তু এতদিনেও কাক্সিক্ষত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস ও মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই ঘটনায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট পবিত্র সরকার, দ্রæতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর পেশকার আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩-এর পেশকার আরিফুল ইসলাম, বিশেষ জজ আদালত-৩-এর স্টেনোগ্রাফার মো. নুরুল ইসলাম ও দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর স্টেনোগ্রাফার মো. আবু হাসানসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।