বিচারিক এখতিয়ারের প্রশ্ন সারবত্তাহীন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রোহিঙ্গা বিতাড়নের প্রশ্নে মামলা বিচারের এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আছে কি-না জানতে চেয়ে যে আবেদন একজন প্রসিকিউটর করেছেন, তাকে ‘সারবত্তাহীন’ আখ্যায়িত করে মিয়ানমার বলেছে, ওই আবেদন খারিজ করে দেওয়া উচিত।
বিচারিক এখতিয়ার প্রশ্নে মিয়ানমারের বক্তব্য জানাতে ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল আইসিসি। মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সুচির দফতর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আইসিসির প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব তারা দেবে না। মিয়ানমার কেন এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে নাÑতার একটি ব্যাখ্যাও সুচির দফতর দিয়েছে। খবর বিডিনিউজ
এতে বলা হয়েছে, আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদার ওই আবেদন মিয়ানমারের ওপর বিচারিক এখতিয়ার পাওয়ার একটি পরোক্ষ চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে, যদিও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যই নয়।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের এ বিবৃতির বিষয়ে আইসিসির প্রতিক্রিয়া তারা তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি।
লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কিনাÑতা জানতে চেয়েছেন হেগের ওই আদালতের কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা গত এপ্রিলে আবেদন করেন।
প্রসঙ্গত, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমনপীড়নের মুখে গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ দিলেও মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার সরাসরি কোনো এখতিয়ার এ আদালতের নেই।
কিন্তু রোহিঙ্গারা যেহেতু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, এভাবে তাদের বিতাড়নের বিষয়টি যেহেতু আন্তঃসীমান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য, সেহেতু আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে ফাতোও বেনসুদার আশা করছেন। তিনি এ বিষয়ে আইসিসির আদেশ চেয়ে আবেদন করার পর হেগের আদালত বাংলাদেশ সরকারের মতামত জানতে চেয়ে গত মে মাসে চিঠি দেয়।
জুনের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার ওই চিঠির জবাব দিয়েছে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। কিন্তু সেখানে মিয়ানমারের বিচারের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে কিনা তা তিনি স্পষ্ট করেননি। বাংলাদেশের মতামত পাওয়ার পর মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চেয়ে সময় বেঁধে দেয় আইসিসি।
ওই আদেশে বলা হয়, মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার মতো অপরাধের যে অভিযোগ এসেছে এবং বিষয়টি বিচারের জন্য যে আবেদন একজন প্রসিকিউটর করেছেন, সে বিষয়ে মিয়ানমারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা প্রয়োজন বলে চেম্বার (আইসিসি) মনে করছে।
সুচির দফতর বলেছে, এ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা মিয়ানমারের নেই। আর মিয়ানমার যেহেতু ওই আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য নয়, সেহেতু এ ধরনের কোনো মামলা শুরু করা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, হেগের আদালতের কার্যক্রমের ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০