বিচারের রায় পেতে ২২ বছর লাগলে কারসাজি বন্ধ হবে না

আমাদের পুঁজিবাজারে নানা ধরনের কারসাজি হয়। এই কারসাজিকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে এটি চলতেই থাকবে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির কারণে ১৯৯৬ সালে মামলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে এসে কিছু পর্যায়ে জরিমানা হচ্ছে। বিচারের ফল পেতে ২২ বছর লেগে গেলে অনেক কারসাজিকারী বেঁচে নাও থাকতে পারে। কারণ ততদিনে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সিইও মো. মঈনউদ্দিন এবং পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. আবদুল মোকতাদির, সিএফএ।
মো. মঈনউদ্দিন বলেন, কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে হল্টেড কারসাজির একটি ধারা চালু হয়েছে এবং এটি আসলে বিভিন্ন মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রুপ বা ব্যক্তি একটি কোম্পানির শেয়ারের কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে। মানে ওই শেয়ারটিকে বিক্রেতাশূন্য করে। এর মাধ্যমে তারা বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে চায়, বর্তমানে এই শেয়ারের প্রচুর চাহিদা আছে এবং যদিও মৌলভিত্তির হিসেবে এর দর যৌক্তিক নয়, পাশাপাশি উচ্চ পিই রেশিওতে লেনদেন হচ্ছে, কিন্তু তার পরও এটির দাম বাড়বে। আর এই ধারণাটি বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়। যেমন প্রথম দিন যখন বিক্রেতাশূন্য হয়, তখন কিছু লেনদেন হয় এবং পরের দিন আবার হয়তো বিক্রেতাশূন্য হয়। এতে হয়তো লেনদেন ও ভলিউম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের বার্তা দেওয়া হয় যে, শেয়ারটির দর বাড়বে, যাকে আমরা গুজব বলে থাকি। আর যারা গুজবভিত্তিক খবরের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করে তারা তখন চিন্তা করে যে, শেয়ারটির দর বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, কাজেই এখানে বিনিয়োগ করা যায়। এভাবেই মূলত হল্টেড কারসাজি হয়ে থাকে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মো. আবদুল মোকতাদির বলেন, প্রথমত, আমি বলব হল্টেড কী? সাধারণত ফাইন্যান্সে হল্টেডকে বলে লিমিট মুভ আপ এবং লিমিট মুভ ডাউন। যখন একটি শেয়ারের দর সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়, তখন একে কথ্য ভাষায় বলা হয় হল্টেড। হল্টেড মানে হচ্ছে সেদিনের মতো সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যখন ধস হলো তার আগে হল্টেড লিমিট ছিল সার্কিট ব্রেকারে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। যারা শেয়ারদর নিয়ে কারসাজি করে, তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীকে বলে, ‘আমি এই শেয়ারটি কিনেছি, আপনারাও কেনেন।’ তারা এই জায়গায় সুযোগ নিচ্ছে। ওই শেয়ার প্রথম দিন হল্টেড হয়, আবার দ্বিতীয় দিনেও হল্টেড হয়। তখন শেয়ারটি কেনার জন্য বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়। তখন থেকে শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে এবং একটি হাই প্রাইসে আটকে যাচ্ছে। তারা যে দামে শেয়ারটি হল্টেড করে, তারা কিন্ত ওই দামে কেনে না। যখন তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মুনাফা করে বেরিয়ে যায়, তখনই সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারও কথা শুনে বা গুজবভিত্তিক বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
আমাদের পুঁজিবাজারে অনেক কারসাজি হয়। এই কারসাজিকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে এটি চলতে থাকবে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির কারণে ১৯৯৬ সালে মামলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে এসে এর কিছু পর্যায়ে জরিমানা হচ্ছে। বিচারের ফল পেতে ২২ বছর লেগে গেলে অনেক কারসাজিকারী বেঁচে নাও থাকতে পারে। ততদিনে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, একটি বিমা কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল হচ্ছে ২২ থেকে ৭০ কোটি টাকা। এখন একটি কোম্পানির যদি মার্কেট ক্যাপিটাল ২২ কোটি টাকা হয়, তখন ওই কোম্পানি নিয়ে কারসাজি বা হল্টেড করা সহজ হয়। সর্বোপরি যখন বাজারের গতি নিচের দিকে থাকে, তখন মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়বে না। তখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দাম বাড়তে থাকে এবং লোভে পড়ে বিনিয়োগকারীরাও ওইসব শেয়ারে আকৃষ্ট হয়, আর তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০