নিজস্ব প্রতিবেদক: অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে আলোচনার আহ্বানে সরকারের সাড়া না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি।’
গতকাল রোববার অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিষয়টির ওপর পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ অক্টোবর তারিখ রেখেছেন।
সর্বশেষ ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করতে আপিল বিভাগ ২০ আগস্ট (গতকাল) পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আপিল বিভাগে ওঠে।
শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন দাখিল করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘গত তারিখে কী করা হবে, বলা হয়েছিল। আলাপ-আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। কার সঙ্গে, কে কে থাকবেন?’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনমন্ত্রী।’
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা বলেন, ‘আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার কথা, আপনারা আলাপ-আলোচনা পর্যন্ত করলেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার কী করার আছে?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলবেন, কোর্টে এসে অন্য কথা বলবেন। আপনাকে বলছি না, আপনাদের কথা বলছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি বলেন, কবে রাখব (পরবর্তী তারিখ) সবাই বসবেন।’
একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সব বিষয় নিয়ে ঝড় উঠে গেছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো কোনো মন্তব্য করছি না। সব তো আপনারাই করছেন। পরবর্তী (তারিখ) কবে চান?’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বন্ধের এক সপ্তাহ পর।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার মতই আমরা রাখলাম। ৮ অক্টোবর তারিখ রাখলাম।’
এ পর্যায়ে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়ার বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য দাঁড়ান মাসদার হোসেন মামলার অন্যতম কৌঁসুলি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আবেদনটি আছে। আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি, সেখানে ধৈর্যের কথাই বলা হলো। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে তেমন রিপার্কেশন (অসহিষ্ণুতা) হয়নি। আমাদের আরও কিছু পরিপক্বতার দরকার আছে।’
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। রায়ের আলোকে নি¤œ আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। ওই বিধিমালা সংশোধন করে দেন আপিল বিভাগ। ওই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করে তা দাখিল করতে গত বছরের ২৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এর পর থেকে রাষ্ট্রপক্ষ দফায় দফায় সময় নিয়েছে। সর্বশেষ সংশোধিত খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এই খসড়া সুপ্রিমকোর্টের সুপারিশ অনুসারে হয়নি বলে জানিয়ে দেন আপিল বিভাগ।
Add Comment