নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন
উপহারসামগ্রী তৈরি ও বিপণন
সব মানুষই প্রিয়জনদের খুশি করতে চায়। প্রিয়জনদের খুশি করার জন্য বিভিন্ন উপলক্ষে উপহার দিয়ে থাকে। বিশেষ করে মা দিবস, বাবা দিবস, বন্ধু দিবস, জন্মদিন, ঈদ, ভালোবাসা দিবস, অফিসের বিভিন্ন প্রয়োজন, যেমন সহকর্মীদের সঙ্গে কোনো বিশেষ দিন বা মুহূর্ত উপভোগের জন্য গিফটের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এ গিফটের জন্য কত ঝামেলাই না পোহাতে হয়। বাজারে যাওয়া। বাছাই করা। উপহার পছন্দ করা। উপহার বক্স কেনা। মলাট লাগানো। বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয় আজও। অতীতের সঙ্গে যেন ফারাক খুঁজে পাওয়া যায় না। কেমন হয় এ ঝামেলাকে ব্যবসা ধরে নিলে? এ কাজটিকেও তো আয়ের অন্যতম উৎস ধরে এগোতে পারেন আপনি। একজন পেশাদার কিংবা ঝানু ব্যবসায়ী উপহার শিল্পকে যেভাবে দেখবেন, মানুষের রুচি, ডিজাইন ও সামর্থ্যরে মধ্যে যে সমন্বয় করবেন, তা একজন সাধারণ উপহার বিক্রেতার মাধ্যমে সম্ভব নয়। কারণ দক্ষতা ও গবেষণার মাধ্যমে গ্রাহকদের নতুন কিছুর স্বাদ দেওয়া সাধারণ বিক্রেতার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি যদি শৈল্পিক ও সৃজনশীল হন এবং উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী তৈরি ও বিপণনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
বাজার সম্ভাবনা
ছোট-বড় সবাই আপনার গ্রাহক হতে পারেন। তাই নিজের বাজার নির্দিষ্ট করতে হবে। সে অনুসারে পরিকল্পনা করতে হবে। ক্রেতাদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নারী। সাধারণত মেয়েরা উপহারসামগ্রী তুলনামূলকভাবে বেশিই কেনে। জন্মদিন, বার্ষিকী, বিভিন্ন দিবস, ধর্মীয় উৎসব, পারিবারিক পার্টি প্রভৃতি উপলক্ষে তারা উপহার সামগ্রী কিনে থাকে। এছাড়া অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের জন্মদিন, নানা বার্ষিকী, পদোন্নতি ও অবসর উদ্যাপন করে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উপলক্ষ ঘিরে উপহারসামগ্রী কেনে। তাই বলা যায়, বছরজুড়েই তাদের কাছ থেকে অর্ডার পেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় পণ্য
টেবিল, ক্রাফটিংয়ের জন্য যন্ত্রপাতি, র্যাপিং পেপার, সাইনেজ, মোড়ক বাঁধার জন্য হিটগান, শেলফ, ক্যাশ রেজিস্টার, শপিং ব্যাগ, গিফট বক্স, কম্পিউটার, ল্যান্ড ফোন, প্রিন্টিং মেশিন, ক্যামেরা প্রভৃতি প্রয়োজন।
বাজারজাতকরণ
প্রচারই প্রসার। ব্যবসার সফলতা ও প্রসারের অন্যতম শর্ত হলো বাজারজাতকরণ। পণ্য যতই উন্নত হোক না কেন যদি বাজারজাতকরণের কৌশল জানা না থাকে, সে পণ্যগুলো ঘরেই থেকে যাবে। তাই ব্যবসায় সফলতার জন্য পণ্যের বাজারজাতকরণে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে:
# যথেষ্ট পরিমাণ বিজনেস কার্ড ও ব্রোশিয়ার প্রস্তুত রাখুন। যখনই সুযোগ পাবেন পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে বিতরণ করুন
# যদি কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করতে চান, সেই এলাকার কাক্সিক্ষত গ্রাহকদের ডেটাবেজ তৈরি করুন এবং তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ইমেইল সংগ্রহে রাখুন। প্রথম থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন
# প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ গ্রাহককে কল বা ইমেইল করুন, তাদের সঙ্গে দেখা করুন ও বিক্রির চেষ্টা করুন
# কেউ যদি আপনার ব্যবসার জন্য কোনো গ্রাহক পাঠান, সেক্ষেত্রে প্রেরককে শুভেচ্ছা উপহার দিন। প্রতিটি উপহারের সঙ্গে বিজনেস কার্ড ও ব্রোশিয়ার দিতে ভুলবেন না
# বিভিন্ন উপলক্ষ ও বিশেষ দিনের তালিকা নখদর্পণে রাখুন। পারলে এ সম্পর্কে ক্রেতাদের দিনগুলোর কথা স্মরণ করানোর উপায় বের করুন। সেক্ষেত্রে পোস্টকার্ড, ইমেইল অথবা কল করতে পারেন। ফেসবুক পেজে আপডেট দিতে পারেন
# কোনো গ্রাহক আপনার পণ্যে সন্তুষ্ট না হলে, তার সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হোন। কারণ গ্রাহকসেবার ওপরই ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে
# সোশ্যাল মিডিয়াকে ওয়েবসাইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। পরে ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে নেবেন
# ক্রেতার রুচি অর্থাৎ কোন ক্রেতা কোন ধরনের উপহার কেনেন, কোন উপলক্ষে কী ধরনের উপহার কেনেন বিষয়গুলো নজরে রাখতে হবে
দাম নির্ধারণ
দাম নির্ধারণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দাম কম বা বেশি রাখা যাবে না। অতি কম দামের হলে লাভের আশা করা যাবে না। এমনকি পণ্যের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। অন্যদিকে চড়াদাম নির্ধারণ করলে গ্রাহক হারাবেন। তাই শ্রমমূল্য, পণ্য খরচ, প্যাকেজিং খরচ, সরবরাহ খরচ, বিক্রি ও বাজারজাত খরচসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ যোগ করে পণ্যের দাম নির্ধারণ করুন। এছাড়া ডিজাইনের ভিন্নতা, গ্রাহকের আকর্ষণের ওপরও কোনো কোনো পণ্যের দাম ভিন্ন হতে পারে। ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লাভ রেখে বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করুন। আবার ক্ষতি পোষানোর জন্য বা বিক্রি বাড়ানোর জন্য লভ্যাংশের হার বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।
খরচ
ঘরোয়াভাবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতে খরচ কম হবে। স্টোর দিয়ে শুরু করলে মূলধন বেশি লাগবে। কেননা স্টোরে টেবিল, গিফট রাখার শেলফ, প্যাকেজিং ও শিপিংয়ের সরঞ্জামসহ কম্পিউটার রাখতে হবে।
অভিজ্ঞতা
উপহার সামগ্রী কেনা, ডিজাইন করা, মলাট করা প্রভৃতির ওপর ধারণা থাকতে হবে। এ ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিখে নিতে পারেন। এছাড়া এ বিষয়ে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনের ওপর স্বল্পমেয়াদে কোর্স করতে পারেন।
শিপন আহমেদ