বিজনেস আইডিয়া: টার্কি খামার

তাহসিন আহমেদ: নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়Ñএমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন

মেলিয়াগ্রিডিডিই পরিবারের এক ধরনের বড় আকৃতির পাখি টার্কি। মুরগির বাচ্চার মতো দেখতে কিন্তু আকারে অনেক বড়। টার্কি পালন বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া টার্কি পালনের জন্য উপযুক্ত।

পুষ্টি উপাদান

টার্কির মাংসে ভিটামিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। চর্বি কম। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি রয়েছে এ মাংসে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে। এতে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই মাংস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক।

টার্কি পালনে সুবিধা

টার্কি পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে পালন করার জন্য উন্নত অবকাঠামোর দরকার হয় না।

উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

অল্প পুঁজিতে খামার করা যায়। অর্থাৎ খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশি।

রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়, তাই টার্কি পালনে ঝুঁকি কম।

 

খামার

 টার্কি খামার করতে বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। মাসে একশ টার্কির পেছনে ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আয় করা যাবে দ্বিগুণেরও বেশি। ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

একটি টার্কির জন্য চার থেকে পাঁচ বর্গফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডিম দেওয়ার সময় টার্কিকে আদর্শ খাবার ও বেশি পানি দিতে হবে। টার্কি দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমি শাক, বাঁধাকপি ও সবজি-জাতীয় খাবার খায়।

পালন পদ্ধতি

সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে টার্কি পালন করা হয় ছাড়া পদ্ধতি, অর্ধছাড়া পদ্ধতি ও আবদ্ধ পদ্ধতি।

ছাড়া পদ্ধতি

ছাড়া পদ্ধতিতে টার্কির রাতযাপনের জন্য একটি ঘরের প্রয়োজন হয়। সকালে সামান্য কিছু খাবার দিতে হয়। সন্ধ্যায় টার্কি নিজেই ঘরে ফেরে। ঘরে আসার অভ্যাস তৈরি করতে সন্ধ্যায় সামান্য খাবার দেওয়া হয়।

অর্ধছাড়া পদ্ধতি

অর্ধছাড়া পদ্ধতিতে টার্কি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সারা দিন ছাড়া অবস্থায় থাকে। দিনের বেলা টার্কি ঘরসংলগ্ন বাঁশের বেড়ার তৈরি জায়গায় থাকে। খাদ্য ও পানির পাত্র ঘরের মধ্যে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর টার্কি ঘরে আশ্রয় নেয়।

আবদ্ধ পদ্ধতি

আবদ্ধ পদ্ধতি তিন ধরনের। এগুলো হচ্ছে লিটার পদ্ধতি, মাচা পদ্ধতি ও খাঁচা পদ্ধতি। লিটার পদ্ধতিতে ঘরের মেঝের ওপর লিটার ব্যবহার করে টার্কি পালন করা হয়। মাচা পদ্ধতিতে মাটি থেকে তিন-চার ফুট উচ্চতায় বাঁশ, কাঠ, তার, লোহা প্রভৃতি দিয়ে মাচার ওপর পালন করা হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক পাঁচ ইঞ্চি দূরত্বে বাঁশ বা কাঠ স্থাপন করতে হয়। খাঁচা পদ্ধতিতে খাবার ও পানির পাত্র খাঁচার সঙ্গে থাকে। খাঁচার সামনের বর্ধিত ঢালু অংশে ডিম গড়িয়ে এসে জমা হয়। এছাড়া খাঁচার মেঝে তারজালির হওয়ায় বিষ্ঠা সহজে নিচে পড়ে যায়। এ পদ্ধতিতে একটি টার্কির জন্য শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে শূন্য দশমিক আট বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন পড়ে।

বৃদ্ধি

ছয় মাস বয়সে ডিম দিতে সক্ষম হয় একটি টার্কি। একদিন বয়সী বাচ্চার ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। ছয় মাসে তা দাঁড়ায় পাঁচ থেকে ছয় কেজিতে। সঠিকভাবে লালন-পালন করা গেলে টার্কির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

রোগবালাই

টার্কি পাখির রানীক্ষেত, ডান্টা, বসন্ত প্রভৃতি রোগ হয়। অতি বৃষ্টি কিংবা বেশি শীতের সময় ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। টিকা দিলে এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

ডিম উৎপাদন

সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম দেওয়া শুরু করে। ২৮ দিন অন্তর ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মায়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০