নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন
কাজের ফাঁকে হঠাৎ জেগে ওঠা ক্ষুধা মেটাতে রুটি, বিস্কুট অথবা কেকের কোনো বিকল্প নেই। অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় খাবারগুলো। কেক ছাড়া জন্মদিন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের কথা তো ভাবাই যায় না এখন। নিশ্চয়ই জানেন, এসব খাবার তৈরি হয় বেকারিতে। ইদানীং এখানকার পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে ফাস্টফুড, মিষ্টিসহ হরেক পদের মজার খাবার। এসব পণ্যের দাম সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এই বেকারি ব্যবসা।
পুঁজি
যে কেউই বেকারির ব্যবসা করতে পারেন। তবে শুরুর আগে এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। চাইলে বড় কারখানা কিংবা ছোট পরিসরেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি নির্ভর করে আপনার পুঁজির ওপর। প্রথমে কারখানা ভাড়া নিয়ে মিক্সচার মেশিন, ওভেনসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হবে। ছোট পরিসরে শুরু করলে প্রথমে তুলনামূলক ছোট কারখানা ও চার-পাঁচজন দক্ষ কর্মচারী হলেই চলে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ও কারখানার পরিসর বাড়ান। পণ্য সরবরাহের জন্য ভ্যানের প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে একটা বেকারির ব্যবসা দাঁড় করাতে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় জিনিস
একটি কারখানাতেই বিস্কুট, কেক, বিভিন্ন ধরনের রুটিসহ সব ধরনের বেকারি পণ্য বানানো সম্ভব। প্রাথমিকভাবে বিস্কুট তৈরিতে লাগবে ওভেন, বিশেষ ধরনের টেবিল, ছাঁচ, পাতা মেশিন (যেখানে বিস্কুট কেটে রাখা হয়) ও মিক্সচার মেশিন। কেক বানাতে প্রয়োজন ছাঁচ, বিশেষ ধরনের কাগজ, ছুরি প্রভৃতি। পাউরুটি বানাতে কিনতে হবে এক বা দুই পাউন্ডের ছাঁচ ও ব্রাশ। এসব যন্ত্রপাতি রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় ভারত ও চীন থেকে। এছাড়া লাগবে প্যাকেটজাত করার মেশিন, আটা, ময়দা, চিনি, তেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য।
প্রশিক্ষণ
এসএমই ফাউন্ডেশন বেকারি পণ্য তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এখানে মানসম্পন্ন খাদ্য তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা, খাদ্যনিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানেও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
বাজারজাতকরণ
বেকারি ব্যবসায় বাজারজাতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজের জন্য দু-তিনজন দক্ষ লোক রাখতে হবে, যারা বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহ করবেন। এছাড়া বড় হাসপাতাল, করপোরেট অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পণ্য সরবরাহ করা গেলে ব্যবসার পরিধি বাড়বে। পরবর্তী সময়ে নিজস্ব শোরুমে বিক্রি শুরু করতে পারেন।
উৎপাদন ব্যয় ও লাভ
সাধারণত আট কেজি বিস্কুট বানাতে প্রায় ৮০০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করা যাবে প্রায় ২০০০ টাকায়। ১৮ পাউন্ড কেক বানাতে এক হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বিক্রি করা যাবে প্রায় তিন হাজার টাকায়। তিন পাউন্ড পাউরুটি বানাতে ৬০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করা যায় ১২০ টাকায়। মাঝারি মানের একটি কারখানা থেকে সব খরচ বাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করা সহজ।
সাবধানতা
ময়দা, ডিম প্রভৃতি উপাদানের পরিমাণ সমান হতে হবে। ওভেনে বেকারি সামগ্রী রাখার পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। বেশি তাপে বিস্কুট পুড়ে নষ্ট হয়। পণ্যের গুণগত মানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বাজারে সুনাম অর্জন করা যেমন কঠিন, তেমনি ধরে রাখাও।
রাহাতুল ইসলাম