বিজয়ের ৫০ বছরে যত অর্জন

আবুল কাসেম হায়দার: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সাল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করল বাংলাদেশ। এই পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অনেক অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর অনেক অনেক দিন। আমাদের নিকট বন্ধু দেশ মালয়েশিয়া মাত্র ২২ বছরে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে। আজ লাখ লাখ দক্ষ, অদক্ষ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিক মালয়েশিয়ায় সে দেশের উন্নয়নে কর্মরত। শুধু সঠিক, যোগ্য, সৎ নেতৃত্বের ফলে এই সফলতা সেই দেশে এসেছে।

কিন্তু আমাদের অর্জনও কম নয়। অনেক অর্জন। তাই আমরা অহংকার করি। গর্ব করি। বাংলাদেশ একসময় ছিল কপালের লিখনের ওপর নির্ভরশীল দেশ। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের মানুষের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। জনগণই উন্নয়নের প্রধান কারিগর। আমাদের সফলতার মূল কারণ হচ্ছেÑখাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া, অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে নারীর অংশগ্রহণ প্রভৃতি। কিন্তু আগামী ৫০ বছরে আমরা কতটা এগিয়ে যাব, সে জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে পরিবর্তন আনা অতিব প্রয়োজন।

এবার আমরা খাতভিত্তিক আমাদের উন্নয়নের কিছু বিষয় আলোকপাত করা যাক।

১. পাট  থেকে পোশাকে: ১৯৭১ সালে শিশু বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। রপ্তানি পণ্য বলতে আমাদের ভরসা ছিল শুধু পাট, অন্যটি চামড়া। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল। মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। তখনকার দেশীয় মুদ্রায় ২৭১ কোটি টাকা মাত্র। মোট রপ্তানিতে পাট ও পাটপণ্যের অবদান ছিল ৮৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর চামড়া খাতের অবদান ছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।

গত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে রপ্তানি পণ্যের যুক্ত হলো তৈরি পোশাক। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে পাটকে হারিয়ে রপ্তানির শীর্ষে উঠে আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। বিগত পাঁচ দশকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১১ গুণ। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার সমান। এই আয় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেকের বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) তথ্যানুযায়ী ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের প্রায় ৯৭ শতাংশই এসেছিল পাট পণ্য থেকে। কাঁচা পাট থেকে ১৩ কোটি ডলার, পাট পণ্য থেকে ১৮ কোটি ডলার, চামড়া থেকে ১ কোটি ৬১ লাখ ডলার, চা থেকে ৯৬ লাখ ৮৮ হাজার ডলার, হিমায়িত খাদ্য থেকে ৩০ লাখ ৬১ হাজার ডলার এবং কৃষিপণ্য থেকে ৭ লাখ ১৩ হাজার ডলার।

এখন তৈরি পোশকশিল্পের কোনো নাম নিশানা ছিল না। তবে ছয় হাজার ডলারের গেঞ্জি রপ্তানি হয়েছিল। তা করেছিলেন মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের রিয়াজ গার্মেন্টস থেকে। ১৯৭৮ সালে ৮ জুলাই তৈরি পোশাকের প্রথম রপ্তানি করেছেন রিয়াজ উদ্দিন। ১০ হাজার পাট ফরাসি ক্রেতা হলান্ডারা ফ্রঁসের কাছে রপ্তানি করেন তিনি। শার্টের রপ্তানি মূল্য ছিল ফরাসি মুদ্রায় ১৩ মিলিয়ন ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

দেশে প্রথম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা স্থাপন করেন দেশ গার্মেন্টেসের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নূরুল কাদের। সাবেক সিএসপি অফিসার। তার পথ ধরে অন্যান্য মিল্পে উদ্যোক্তারা এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেন। দেশ হয়ে পড়ে তৈরি পোশাকশিল্পের একমাত্র শিল্প খাতভিত্তিক রপ্তানিকারক দেশ। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের মোট রপ্তানির মধ্যে পোশাকশিল্প খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার। তাই বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় অবস্থানে। তাই আজ দেশ পাট থেকে পোশাকে এসে দাঁড়িয়েছে।

২. আমাদের বড় অর্জন স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা : আমাদের ৫০ বছরে বড় অর্জন স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ। যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দীর্ঘ ও সংকটময় পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এ ছাড়া ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় বিশাল মানবিক কাজ করেছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের চিঠিতে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয় অপেক্ষাকৃত কম থাকা সত্ত্বেও মা ও শিশু মৃত্যু, টিকাদান, বিদ্যালয় ভর্তি হার এবং অন্যান্য সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য অর্জন অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

৩. প্রবাসী আয় বৃদ্ধি: আমাদের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক খাত হচ্ছে প্রবাসীদের অর্জিত আয়। প্রতিদিন, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন। তাতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রবাসীদের আয়ের হিসাবে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। যেখানে ভারত আয় করে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, চীন আয় করে ৬ হাজার কোটি ডলার, অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় হচ্ছে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

৪. মাথাপিছু আয়: মাথাপিছু আয় নিয়ে আমরা এক সময় চিন্তা করার সুযোগ পেতাম না। ১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৪ ডলার। আর ২০২০-২১ সালে আমাদের মাথা পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। বিরাট এই অর্জন ৫০ বছরে। মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পরপর দুই বছর ধরে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াতে পারে ২ হাজার ১৩৮ ডলার। সেই তুলনায় ভারতে হবে ২ হাজার ১৬৬ ডলার। পাকিস্তানের ও মাথাপিছু আয় ২ হাজারের একটু বেশি। স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্জন অনেক।

৫. দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য: দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের অগ্রগতি কিছুটা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮৯ শতাংশ। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে তা দাঁড়ায় ২০ শতাংশ। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এর হার ৩৯ শতাংশ। তবুও কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।

৬. গড় আয়ু বৃদ্ধি: আমাদের গড় আয়ু বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু অনেক বেশি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৬ বছর। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু যথাক্রমে ৬৭ দশমিক ৭ বছর ও ৬৭ দশমিক ৩ বছর। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতের সুফল মিলছে গড় আয়ুতে।

৭. বাজেটের আকার বৃদ্ধি: আমাদের ৫০ বছরে এসে জাতীয় বাজেটের আকার অনেক বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি। ১৯৭১ সালে মাত্র সাড়ে ৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ। ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালের জাতীয় বাজেট হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বৃহৎ এই বাজেট দেশের উন্নয়নে কাজে আসবে। উন্নয়নের ধারায় বাজেটের এই বৃদ্ধি।

৮. জিডিপি-প্রবৃদ্ধি : কভিডকালেও আমাদের ২০২০-২১ সালে জিডিপি অর্জিত হয়েছে ৫.৪৭ শতাংশ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে আমাদের জিডিপি ২.৫ শতাংশ। উন্নতি ও অগ্রগতির ফলে আমাদের এই উন্নয়ন।

৯. রাজস্ব আয় বৃদ্ধি : আমাদের রাজস্ব আয় বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের ১৯৭২-৭৩ সালে সর্বমোট রাজস্ব আয় হয় ১৬৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৫০ বছরে তথা ২০২০-২১ সালে আমাদের রাজস্ব অর্জিত হয় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অর্জন। রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৫৬৬ গুণ। অঙ্কের দিক দিয়ে অনেক বড় অর্জন।

১০. কৃষি খাতে অর্জন : গত ৫০ বছরে কৃষিতে বড় অর্জন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে কৃষিতে বিপ্লব হয়েছে। খাদ্যশস্য ১৯৭২ সালে উৎপাদিত হয় ১ দশমিক ২০ কোটি টন। আর ২০২০ সালে উৎপাদিত হয় ৪ দশমিক ২৫ কোটি টন।

সবজি উৎপাদনে আমরা পৃথিবীর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছি। সবজি উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম চীন এবং দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। বর্তমানে আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিদেশ সবজি রপ্তানি করছি। তবে কীটনাশক ব্যবহার দেশে ঠিক হচ্ছে না। তাই খাদ্য নিরাপত্তা বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ব্যাপারে সরকারকে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত। তাই স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি খাতের অন্যতম পাট, একসময় বিশ্বে দাপটের সঙ্গে রপ্তানি হতো। এখন পাটের ব্যবহার কমে গেছে। আমাদের পাট উৎপাদনে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি। এক সময় পাটই আমাদের রপ্তানির একমাত্র পণ্য ছিল। তবে বর্তমানে পাটের ‘জিন’ আবিষ্কার ফলে পাটের উৎপাদন ও বিপণন বাড়বে। দেশে এখন নানা রকম পাট পণ্য তৈরি হচ্ছে, রপ্তানিও হচ্ছে। কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তখনও পৃথিবীর উৎপাদিত পাটের মধ্যে বাংলাদেশ উৎপাদন করছে ৪২ শতাংশ। প্রথম উৎপাদনকারী দেশ ভারত করছে ৫৫ শতাংশ এবং তৃতীয় উৎপাদন করা দেশ চীন করছে ১.২৬ শতাংশ।

১১. স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন: কভিডকালে স্বাস্থ্য খাতের করুণ অবস্থা আমাদের হতাশ করেছে। দুর্নীতির চিত্র আমাদের আরও বেশি ব্যথিত হয়েছে। তবুও কিছু অর্জন আমাদের আনন্দিত করে। শিশুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ এগিয়ে। বাংলাদেশের শিশুরা জন্ম নেয়ার পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ বেঁচে থাকে। নবজাতক ও শিশুর মৃত্যুর হার কমেছে। বাংলাদেশের শিশু জন্ম নিতে প্রতি এক লাখ মায়ের মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে ১৭৩ জন।

১২. নারীর ক্ষমতায়ন: বাংলাদেশে নারীরা নানা দিকে এগিয়ে। রাজনৈতিকভাবে বেশ অগ্রসর। বর্তমানে দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী, জাতীয় সংসদে নারীর সংখ্যা ২১ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানে ১৩ শতাংশ ও ২০ শতাংশ।

শ্রম শক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। ২০০৭ সালে শ্রম শক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ২৯ শতাংশ। সে কারণে বর্তমানে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬ শতাংশ।

শিক্ষায় বাংলাদেশের নারীরা বেশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের ২৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই মাধ্যমিক পাস। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানে এই হার মাত্র ২৭ শতাংশ।

আমাদের সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসন, শিক্ষা প্রভৃতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশ ভালো। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নারীরা দাপটের সঙ্গে চাকরি করছে। দেশ এখন যেন নারীরা চালাচ্ছেন। বেসরকারি খাত ব্যাংক, বিমা, শিল্প কারখানায় নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও শ্রমিক বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৩. বিদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে: বিদেশের মাটিতে আমাদের শান্তি রক্ষী বাহিনীর অবস্থান আমাদের ৫০ বছরের বড় অর্জন। আমাদের সেনারা সুনামের সঙ্গে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করছেন। অর্থ ও উপার্জন করছে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গে সুনাম কুড়িয়ে আনছে। তবে এত অর্জন আমাদের মোহিত করে। আমরা আনন্দিত হই। আমরা গর্ব করি। বিশ্বদরবারে আমাদের অর্জন সব অহংকারের।

১৪. ক্রিকেট আমাদের বড় অর্জন : এক সময় পৃথিবীর কোনো দেশে বেড়াতে গেলে যদি বলতাম আমার দেশ বাংলাদেশ। এখন বলত হো-ইন্ডিয়া। তখন আমরা বুঝানোর জন্য বলতাম, না বাংলাদেশ, ঢাকা। ইন্ডিয়ার পাশে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিচয় সংকট দূর হয়েছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আমাদের ‘ক্রিকেট’ আমাদের আর নতুন করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার বুঝিয়ে দেশের পরিচয় দিতে হয় না। ক্রিকেটে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা প্রচুর নিয়ে আসছে। ক্রিকেট খেলোয়াড়রা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে সহযোগিতা করছে। অনেক ব্যাংক, বিমা, শেয়ার বাজার প্রভৃতি খাতে বিপুল বিনিয়োগ দেশে-বিদেশে করছে। তাই ক্রিকেট আমাদের আর একটি নতুন শিল্প খাত। ৫০ বছরের সেরা অর্জনের একটি ‘ক্রিকেট’।

তবে এ সাফল্যকে আরও সংহত করতে হলে আগামী দিনে দুটি বিষয়ের প্রতি গভীর মনোনিবেশ দিতে হবে। একটি হলো বৈষম্য। দেশে এখন বৈষম্য কাঠামোগত রূপ পেয়েছে। সমাজ ও অর্থনীতির ভেতর বৈষম্য একটা অবশ্যম্ভাবী বিষয় হয়ে উঠেছে; যেটা হওয়ার কথা নয়। শুধু বৈষম্য নয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশেও বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি। স্বাধীনতার মৌলিক বিষয় থেকে আমরা সরে এসেছি। যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, সেই বিষয় সমূহ আজ কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা পিছিয়ে পড়ছি। নানা দিক থেকে দুর্নীতি ও আর্থিক খাতের ব্যাপক অর্থ পাচার আমাদের অর্থনীতির চিত্র নড়চড়ে হয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। মানুষের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি পরিষেবার গুণগত মান খুবই কম। এটা অনেক বাড়াতে হবে। প্রথমে ৫০ বছরের যে সাফল্যের কথা বলছি তা সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। তা করা যাবে না। তা অবশ্যই কমিয়ে আসতে হবে। তবেই স্বাধীনতার সঠিক মূল্যবান হবে। মানুষের মনে শান্তি আসবে। নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি জাতি গড়ে তোলা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণার চেতনা। আজ দুর্নীতিতে আমাদের সমাজের সর্বত্র দিশাহারা। সমাজ পিছিয়ে পড়ছে। মূল্যহীন জীবন, মানুষ, নেতা সমাজকে গিলে ফেলছে। শিক্ষা বাড়ছে। শিক্ষিত জনশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সুশিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষা হ্রাস পাচ্ছে। তাই প্রয়োজন সুশিক্ষিত, মূল্যবোধ সম্পন্ন নৈতিক চরিত্রবান শিক্ষক। তা হতে পারে আমাদের পারিবারিক পরিবেশ থেকে। পরিবার থেকে হয় মূল শিক্ষা। পরিবারকে হতে হবে সুশিক্ষায়, আদর্শ শিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত। তবেই শিশু গড়ে উঠবে সৎ, চরিত্রবান, মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক। নতুবা শিক্ষিত হবে, মানুষ হবে না। আজকের ৫০ বছরের পর আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল  ও  আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

E-mail-aqhaider@you:hgroupbd.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০