বিজিএমইএর সেমিনারে অভিমত: দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বয়হীন ২২ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে চাকরির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ লোক বৃদ্ধিতে উদ্যোগ খুবই সীমিত। ২০২১ সাল নাগাদ বিভিন্ন খাতে ৩৬ লাখ দক্ষ লোকের প্রয়োজন হবে। আধা দক্ষ লোক লাগবে আরও ১৩ লাখ। এখন কৃষি-খাদ্য ও তৈরি পোশাক খাতে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪০ শতাংশ দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রকল্প রয়েছে অন্তত ২২টি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু, তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) উদ্যোগে স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পের (সেপ) আওতায় আয়োজিত কর্মসংস্থান মেলায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনব্যাপী এ মেলায় তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির আবেদন গ্রহণ করে। এতে সহস্রাধিক চাকরিপ্রার্থী তাদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ভিড় করেন। এ সময় সেপ প্রকল্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীদের সরাসরি চাকরি দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন। পরে সেখানে ‘দক্ষতার ঘাটতি পূরণ উন্নয়নের চাবিকাঠি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রফতানি বাড়লেও তৈরি পোশাক খাতের রফতানির বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। গার্মেন্টের রফতানির ভলিউম কমেনি। কিন্তু, ডলার-পাউন্ডের দরপতনের কারণে বৈদেশিক
মুদ্রা কমে যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বিদেশিরা যেহেতু ট্রেড ইউনিয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে, আমাদের পোশাক খাতের এখন সময় হয়েছে ট্রেড ইউনিয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার। আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন হলে ক্রেতাদের কাছে দাম বৃদ্ধির জন্য দাবি করার সুযোগ হবে। এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান খাতভিত্তিক ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। রেমিট্যান্সও কমতে শুরু করেছে। রফতানির বৃদ্ধিও কমছে। এগুলো নতুন করে আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে। শ্রমবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় আমরা দেখেছি ৯টি শীর্ষ খাতের মধ্যে গার্মেন্ট ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে সবচেয়ে বেশি দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। কিন্তু, এ দুই খাতেই সবচেয়ে বেশি দক্ষতার ঘাটতি আছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও ৪০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। গার্মেন্ট খাতে দক্ষ লোকের বর্তমান চাহিদা ৬ লাখ। আর ১২ লাখ আধাদক্ষ লোক দরকার। ২০২১ সালে এই চাহিদা ৩৬ লাখ হবে। সেজন্য দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।
এ সময়ে অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের পরিচালক এবিএম খোরশেদ আলম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সেপ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক আবদুর রউফ তালুকদার এবং জার্মান সংস্থা সুদক্ষের টিম লিডার পল ওয়েজার্স বক্তব্য রাখেন।
এ সময় এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, ইতোমধ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি নেওয়া হয়েছে। ১১টি খাতের শিল্পে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাউন্সিল রয়েছে। এখন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও গুণগত মান বজায় রাখা দরকার। ২০১৫ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছর দক্ষতার অভাবে শ্রমবাজার থেকে আড়াই লাখ লোক ঝরে পরে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
সেপ’র প্রকল্প পরিচালক আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কারিকুলাম নেই। ২২টি মন্ত্রণালয় আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণ প্রকল্প রয়েছে। এদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তবে দ্রুতই একটি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে সমন্বয় করার জন্য।
আতিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক খাতে দক্ষ লোকের অভাবে আমরা প্রায় ২০ হাজার বিদেশি লোককে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি, যারা বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা বিজিএমইএর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। এর ফল পেতে অনেক দেরি হবে। তবে, প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করা দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০