বিটিআরসিতে এক বছরে সাড়ে ১৫ হাজার অভিযোগ

হামিদুর রহমান: দেশে পরিচালিত মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে ডেটা স্পিড, কলড্রপ, ডেটা ভলিউম ইস্যু, সিম বার, রিচার্জিং, এমএনপি, প্যাকেজ মাইগ্রেশনসহ নানা ধরনের সেবায় অভিযোগ বাড়ছে গ্রাহকদের। গত এক বছরে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) প্রায় ১৫ হাজার ৩৩৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে ডেটা স্পিড ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে।

বিটিআরসি’র তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে বিটিআরসিতে অভিযোগ জমা পড়েছে পাঁচ হাজার ৮২২টি, ডেটা স্পিড নিয়ে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়েছে দুই হাজার ৯২৪টি, একই সময়ে ইনকামিং অ্যান্ড আউটগোয়িং/এসএমএস রিলেটেড ইস্যু নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৯৮৮টি, মিসালেনিয়াস (বিবিধ) ৮২০টি, একই সময়ে ডেটা ভলিউম ইস্যু নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৪৮টি, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৬২৭টি, সিম বার নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৬৭টি, রিচার্জ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৩৪টি, ট্যারিফ রিলেটেড অভিযোগ ৪১৯টি, ডিসকানেকটেড কল নিয়ে অভিযোগ ৩৯২টি, এমএনপি নিয়ে অভিযোগ ৩৭১টি, প্যাকেজ মাইগ্রেশন নিয়ে অভিযোগ ৩১৬টি, আইএসপি নিয়ে অভিযোগ ১৬৮টি, ফেরাউডুল্যান্ট অ্যাক্টিভিটিস নিয়ে অভিযোগ ১৬০টি, সিম রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অভিযোগ ১৪৬টি, সিম ওনারশিপ নিয়ে ১৩২টি, আনসোলিসিডেট কল/এসএমএস অভিযোগ ১২০টি, এমএফএস/ব্যাংকিং নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৯৩টি, লাইসেন্স ইস্যু নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৮৯টি, টেস্ট কল নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৭টি, আনঅথোরাইজড হ্যান্ডসেট/এনইআইআর নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৫৫টি, কইজ/প্রাইস/অ্যাওয়ার্ড ইস্যু নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৫১টি এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ২৩টি। এছাড়া অন্যান্য বিষয় নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে তিনটি।

তথ্যমতে, বিটিআরসিতে জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১১ হাজার ৮০৯টি। তবে এখনও নিষ্পত্তি করা হয়নি তিন হাজার ৫২৬টি অভিযোগ। অর্থাৎ বিটিআরসিতে জমা পড়া অভিযোগের প্রায় ৩০ শতাংশ অভিযোগ এখনও নিষ্পত্তি করা হয়নি।

জানতে চাইলে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গ্রাহকদের যে কোনো অভিযোগ আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। আমাদের কাছে গ্রাহকদের প্রাধান্য সবার আগে। গ্রাহকরা এখন নতুন নতুন সেবায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, অভিযোগও বাড়ছে, সমাধানও হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় আপডেট করছি। অপারেটরগুলোর বিভিন্ন প্যাকেজ কমিয়ে আনা হয়েছে। সম্প্রতি ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে, দামেও সাশ্রয়ী করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উন্নত প্রযুক্তির আগমন হলেও মানসম্মত সেবা পাওয়া দুষ্কর। পাশাপাশি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নানামুখী অফারে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হলেও সমাধান মেলে না। প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক অপারেটরগুলোর বিভিন্ন অফার ও সার্ভিসে ভোগান্তি প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি বা ভোক্তা অধিকারে খুব কমসংখ্যক গ্রাহক তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন। কেননা বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এখনও জানেই না ভোগান্তি বা প্রতারণার শিকার হলে কোথায় কীভাবে অভিযোগ করতে হয়। আবার অনেক গ্রাহক কাজের ব্যস্ততার কারণে উপায় জেনেও অভিযোগ করতে চায় না।

তারা আরও জানান, দেশে উন্নত প্রযুক্তির ফোরজি সেবা চালু হলেও মানসম্মত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, বরং নেটওয়ার্ক অসক্ষমতা, ডেটা স্পিড ও কল ড্রপ বাড়ছে। ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় এখন নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক থাকে না। গ্রামের অনেক গ্রাহক প্রযুক্তির সম্পর্কে জ্ঞানহীন, তারা প্রতারণার শিকার হলেও বুঝতে পারেন না। আবার কেউ বুঝলেও সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করতে পারেন না। অপারেটরগুলোর নানা ধরনের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কোয়ালিটি অব সার্ভিস চালু হলেও আদতে এর কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। কেননা কোয়ালিটি অব সার্ভিস বাস্তবায়িত হলে অপারেটরগুলোর গ্রাহক ঠকানোর মতো সেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। তখন অপারেটরগুলো মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে বাধ্য হবে। এর জন্য বিটিআরসিকেই শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিউদ্দিন আহম্মেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাস্তবতা হলো গ্রাহকদের কোনো অভিভাবক নেই। বিটিআরসির ওয়েবসাইটে অনেক গ্রাহক অভিযোগ দিলেও তা আমলে নেয়ই না। বিটিআরসি’র উদাসীনতার কারণে গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকদের যেকোনো অভিযোগ সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা। এমনি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স বাতিলের বিধানও আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন পর্যন্ত কোনো অপারেটরকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে দেখিনি। বিটিআরসি’র শর্টকোড ১০০-তে ফোন করলেও বেশিরভাগ সময় কেউ ফোন ধরেন না। আগারগাঁওয়ে নিজেদের জায়গায় বিশাল বড় বিল্ডিং করলেও সেখানে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা নেয়ার মতো একটা সেন্টার রাখা হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন বিটিআরসিকে বলছি, গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে সপ্তাহে নয় অন্তত মাসে একটা গণশুনানির ব্যবস্থা করা হোক। যদিও বছরে লোকদেখানো একটা গণশুনানির আয়োজন করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত যে কোনো ধরনের অভিযোগ করতে ভোক্তা অধিকার অধিদপপ্তরে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। তবে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ ভোক্তা অধিকারে গ্রহণ না করতে হাইকোর্টে রবি আজিয়াটা রিট করে। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই ভোক্তা অধিকার অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নিচ্ছে না। আবার বিটিআরসি’র শর্টকোডে ফোন করেও অনেক সময় গ্রাহকরা অভিযোগ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০