বিড়ি শ্রমিকদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে বিড়ির ওপর করবৃদ্ধি ঠেকাতে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে দেখা যায়, যা স্বতঃস্ফূর্ত নয়। এটি বিড়ির কারখানা মালিকদের সাজানো নাটক। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বিড়িশ্রমিক আন্দোলনের কারণ অনুসন্ধান: একটি গুণগত বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) এই গবেষণার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে গবেষণার ফল তুলে ধরেন প্রজ্ঞার হাসান শাহরিয়ার। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) গবেষণায় সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, আকিজ বিড়ি কোম্পানিই মূলত এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে আকিজ বিড়ির কারখানা রয়েছে, সেসব জায়গায় এই আন্দোলন বেশি হয়। রংপুরের আজিজ বিড়ি, মায়া বিড়ি ও পাবনার বাংলা বিড়ির মালিকপক্ষও শ্রমিকদের আন্দোলনে নিয়ে যায়। বিড়ির দাম বাড়লে বিড়ি বন্ধ হয়ে

 যাবে, শ্রমিকদের কাজ থাকবে না, সরকার বিড়িশিল্প বন্ধ করে দিতে চায়Ñএসব ভয় দেখিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের আন্দোলনে নামায় মালিক পক্ষ। ফলে শ্রমিকরাও বাধ্য হয়ে করবৃদ্ধি ঠেকানোর আন্দোলনে অংশ নেয়। গবেষণায় বিড়ি শ্রমিকদের কল্যাণে নিয়োজিত কোনো শ্রমিক সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিড়ি শ্রমিকদের অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে দাবি করা সংগঠনগুলো মূলত মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। প্রকৃত শ্রমিকরা এসব সংগঠনের সদস্য নয়। বিড়ি কারখানাগুলোয় শ্রমিক ইউনিয়ন বা অ্যাসোসিয়েশন খোলার অনুমতিও দেয়া হয় না। বরং অ্যাসোসিয়েশন চালুর চেষ্টা করায় অনেকে কাজ হারিয়েছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়ি শ্রমিকদের এই আন্দোলনে লাভবান হন মালিকরা। ২০১৯ সালে বিড়ি শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে বিড়ির ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ফলে এক হাজার শলাকা বিড়িতে মালিকদের আয় বাড়ে ২৮ টাকা। অথচ শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয় মাত্র ছয় টাকা। উল্লেখ্য, বাজেটে বিড়ির শুল্ক না বাড়িয়ে কেবল খুচরামূল্য বৃদ্ধি করায় ২০১৮ থেকে ২০২০ সালÑএই তিন বছরে প্রতি এক হাজার শলাকায় মালিকদের মুনাফা বেড়েছে ১১৮ দশমিক আট টাকা।

গবেষণায় বিড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে বিড়ির ওপর উচ্চহারে করারোপ, বর্ধিত কর থেকে আহরিত রাজস্ব বিড়ি শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যয় করা, কর আইন ও শ্রম আইন, বিশেষত শিশুশ্রম ব্যবহার-সংক্রান্ত আইন প্রতিপালনে বিড়িশিল্পকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনা এবং বিড়ি শিল্প মালিকদের বিকল্প ব্যবসায় যেতে ঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া প্রভৃতি সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশে বিড়িশিল্পের নিবিড়তা, শ্রমিক আন্দোলন সংগঠনের প্রবণতা ও তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে লালমনিরহাট, রংপুর, পাবনা ও কুষ্টিয়ায় ২০২১ সালে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, গবেষণার ফলে আমি একমত। এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খাত। সরকারের উচিত হবে এই শিল্পকে নিরুৎসাহিত করা। সভাপতির বক্তব্যে সিটিএফকে বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিক শোষণের বড় উদাহরণ হচ্ছে বিড়িশিল্প। সাজানো আন্দোলনে প্রকৃত লাভবান হয় মালিকপক্ষই।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০