বিড়ি-সিগারেটে অভিন্ন করহারের দাবি ১৩৯ সংসদ সদস্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক : তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ত্বরান্বিত করতে এবং সব ধরনের বিড়ি ও সিগারেটে অভিন্ন করহারসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন করে তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ১৩৯ সংসদ সদস্য। গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব কনফারেন্স রুমে এক আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন উদ্যাপন ও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং (ইচঋঐড)’। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘তামাক জনস্বাস্থ্যরে জন্য একটি বড় হুমকি। বিড়ি ও সিগারেটের মত ধোঁয়াবিহীন তামাকও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। তামাক কোম্পানিগুলো অনেক শক্তিশালী, তাই তারা যেন তামাককর বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি না করে, সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তামাককর থেকে প্রাপ্ত স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।’

ফোরামের সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় চার কোটির কাছাকাছি মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং বছরে দেশের প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের অতি দ্রুত কর বৃদ্ধি করে তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে।’

সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। এর মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৫৩ জন এমপির চিঠি, তামাক আইন সংশোধনের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি এবং সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকের ওপর কর বৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে ১৩৯ সদস্যের চিঠি দেয়া উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, ‘তামাকের ওপর যুক্তিযুক্ত কর ও মূল্য বৃদ্ধি করা গেলে প্রায় ১০ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া বাড়তি ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে, যা বর্তমানে প্রাপ্ত রাজস্বের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।’

সংসদ সদস্যদের এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়স্থলে তামাকদ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, খুচরা বিক্রি বন্ধ করা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতার ওপর জোর দেয়া এবং ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) নিষিদ্ধ করা। আলোচনা সভায় সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এবং তামাকের নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্তে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের বিড়ি ও সিগারেটে অভিন্ন করহারসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলনের দাবি জানান।

আলোচনা সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক, মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, মো. আক্তারুজ্জামান, আহসানুল ইসলাম (টিটু), ড. মো. আব্দুস শহীদ, বেগম শিরীন আহমেদ, বেগম শবনম জাহান, আরমা দত্ত, বেগম হোসনে আরা, বেগম অপরাজিতা হক, মনিরা সুলতানা, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, জাকিয়া তাবাস্সুম, আদিবা আনজুম মিতা, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, রতœা আহমেদ, উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সাচিবিক দায়িত্বে থাকা উন্নয়ন সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ১৪৮টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ধূমপায়ীর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। তাছাড়া, এই তামাকের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় সাত হাজার ৬৬০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই হুমকি মোকাবিলা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত পণ্যের কর বাড়িয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০