Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:15 pm

বিতরণের চেয়ে আদায় বেশি কৃষিঋণে

শেখ আবু তালেব: ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়ার এক নীরব সংস্কৃতি গড়ে তুলছে দেশের কৃষক সমাজ। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এখনও পুরোনো ঋণ ফেরত দিচ্ছেন বেশি। এর বিপরীতে নতুন ঋণ নিচ্ছেন কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারিতেও কৃষিকাজ অব্যাহত ছিল। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা পণ্যের দাম পেয়েছেন। ফলে ঋণ ফেরত দিতে পারছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে পাঁচ হাজার ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ সময় কৃষকরা ঋণ ফেরত দিয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের চেয়ে ৩৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেশি ফেরত দিয়েছেন কৃষকরা। গত অর্থবছরের (২০২০-২১) আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছিল চার হাজার ৬৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ।

শুধু গত সেপ্টেম্বরে ঋণ বিতরণ হয়েছে দুই হাজার ৫৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত কৃষকদের কাছে ঋণের স্থিতি রয়েছে ৪৫ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিল ২৫ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ সময় আদায় হয়েছিল ২৭ হাজার ১২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর শেষে দেখা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় হয়েছে বেশি।

ঋণের স্থিতি ছিল ৪৫ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এসব ঋণ সুবিধা পেয়েছেন ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষক। তাদের মধ্যে ১৬ লাখ নারী। তারা ঋণ নিয়েছিলেন ৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের জন্য সামগ্রিকভাবে ২৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় সাত দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করবে।

কৃষিঋণের সুদহার হবে ৮ শতাংশ। গত বছর এপ্রিলে দেশের ব্যাংক খাতে সব ঋণের (ক্রেডিট কার্ড ব্যতিরেকে) সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। এরপর আলোচনায় আসে কৃষিঋণ নিয়ে। সমালোচনার পর কৃষিঋণ আট শতাংশ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এবারের কৃষিঋণ বিতরণের নীতিমালা প্রণয়নে কভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কিছু সংস্কারও আনে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও নতুন কিছু সুবিধা দেয়া হয় ওই নীতিমালায়। সংযোজিত নীতিমালায় প্রাণিসম্পদ খাতের পোলট্রি উপখাতের আওতায় সোনালি মুরগি পালনের জন্য ঋণের সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া প্রাণিসম্পদ খাতের পশুসম্পদ উপখাতের আওতায় মহিষ ও গাড়ল পালনের জন্য ঋণ নীতিমালা, ফসলভিত্তিক ঋণ নীতিমালা, কৃষকদের ঋণসীমা বাস্তবতার আলোকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি ও মাছ চাষের জন্য ঋণ সহজীকরণ বিষয়টি সংযোজন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও মঞ্জুরের বেলায় নীতিমালা উন্নয়ন করায় কৃষকরা উপকৃত হবেন। তাদের ঋণ নেয়ার সক্ষমতা বাড়বে। এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

নিয়মিত কৃষিঋণের বাইরে কভিড মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্যও বিশেষ ঋণের তহবিল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ শীর্ষক তহবিল থেকে কৃষকরা চার শতাংশে ঋণ নিতে পারছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক শতাংশে সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এ তহবিল থেকে অর্থ নিতে পারবে।

কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ চার শতাংশ হারে সুদ নিতে পারবে তারা। এ তহবিলে অর্থের জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নিয়মিত কৃষিঋণের মোটের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পারছেন।