Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:09 pm

বিতর্কিত তিন কোম্পানির শেয়ারদর তিন মাসে বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বাড়ছে সব ধরনের শেয়ারদর। মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির পাশাপাশি বাড়তে দেখা যাচ্ছে দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারদর। মৌলভিত্তিতে থাকা কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দর বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ার। এ তালিকায় রয়েছে বস্ত্র খাতের বিতর্কিত তিন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑতুংহাই নিটিং, ফ্যামিলি টেক্স ও সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ। কোম্পানিগুলো থেকে কোনো ধরনের রিটার্ন পাচ্ছেন না শেয়ারহোল্ডাররা। দায়-দেনায় ডুবে যাওয়া কোম্পানিগুলোর উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন এসব শেয়ারের চাহিদা ছিল না। নিয়মিত এসব শেয়ারে দেখা যেত ক্রেতার খরা। এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর নেমে যায় তলানিতে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এর উল্টো চিত্র।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকার কারণে সম্প্রতি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে শুরু করেছে। মূলত বিনিয়োগকারীরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন কম দরের শেয়ারে। এর জের ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে শুরু করেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, তিন মাস আগে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ারদর ছিল দুই টাকা ৩০ পয়সা। এরপর থেকে কোনো সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই টানা বাড়তে শুরু করে এর দর। সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয় ৬ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্য প্রতিটি শেয়ারদর বেড়েছে ১৬৫ শতাংশের বেশি।

একইভাবে তিন মাস আগে ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ারদর ছিল দুই টাকা ৮০ পয়সা। এরপর থেকে দর বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা বিক্রি হয় পাঁচ টাকা ৩০ পয়সায়।

এদিকে তিন মাসে তুংহাই নিটিংয়ের প্রতিটি শেয়ার কিনতে গুনতে হয়েছে তিন টাকা। এরপর থেকে অজানা কারণে শেয়ারদর বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ শেয়ারে বিক্রি হচ্ছে সাত টাকা থেকে আট টাকায়। সর্বশেষ এ কোম্পানির শেয়ার সাত টাকা ৪৫ পয়সায় লেনদেন হতে দেখা যায়।

দিন দিন ফ্যামিলি টেক্সের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ফ্যামিলি টেক্সের লোকসান ছিল দুই কোটি ৮১ লাখ টাকা। পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের পাঁচ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দেয়।

একদিকে ২০১৬ সালের পর কোম্পানির প্রোফাইলে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের কোনো তথ্য নেই। এ বছর কোম্পানি ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুনাফা করে। এর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল চার কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এরপর থেকেই কোম্পানির ভগ্নাদশা শুরু হয়। একইভাবে ২০১৬ সালের পর কোম্পানি প্রোফাইলে কোনো আর্থিক তথ্য পাওয়া যায়নি তুংহাই নিটিংয়ের। সর্বশেষ ২০১৪ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়।

এদিকে কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দর বাড়ার বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে কোনো ভালো কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লে তা স্বাভাবিক। কারণ বাজারের জন্য ভালো শেয়ার খুবই জরুরি। অন্যদিকে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লে তাতে ঝুঁকি থেকে যায়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন যেসব স্বল্প দরের শেয়ারদর বাড়ছে এক সময় তার দর অনেক বেশি ছিল। সেই হিসাব করতে গেলে এ দর বাড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যেসব কোম্পানির অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে, সবই আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।