শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগামী বাজেটের কৌশল’ বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ৮০ শতাংশ বিত্তবান কর ফাঁকি দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ ভ্যাট দেয় না। এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন চালানোই যাচ্ছে না; সেখানে সরকার উন্নয়ন ব্যয় মেটাবে কীভাবে। তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু ব্যক্তি দুবাই-সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের দেশে শতকোটিপতিদের (বিলিয়নিয়ার) তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। তারা কোন দেশের নাগরিক হিসেবে তা করেছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা কীভাবে টাকা আনা-নেওয়া করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুর্নীতি ও অন্যায্যতা বহাল রেখে আসন্ন বাজেটে করারোপ করা হলে তা রাজস্ব আহরণে ভালো ফল দেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুল্ক, কর ফাঁকি বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। নানা পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও কর ফাঁকির প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনের যেমন দুর্বলতা রয়েছে, তেমনি আছে আইন প্রয়োগে প্রশাসনের উদাসীনতা। গত বছর বেসরকাারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বলেছে কর ফাঁকির কারণে এনবিআরের কর ক্ষতির পরিমাণ ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিশ্চয়ই এ পরিমাণ এখন অনেক বেশি।
কর ফাঁকি বা কর দিতে অনীহা বাংলাদেশের মানুষের অভ্যাস বলা যেতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় কর ফাঁকি বা অনীহা বলতে কিছু নেই। দেশে রাতারাতি কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, আর সেইসঙ্গে কর দিতে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ছে, কিন্তু তারা কর দিচ্ছেন না।
বর্তমান সরকার অবশ্য কর ফাঁকি বন্ধ ও সক্ষম ব্যক্তিদের কর দিতে বাধ্য করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে যে সুফল মেলেনি, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, সরকারের নীতিনির্ধারক সবাই মনে করেন দেশের যে পরিমাণ মানুষের আয়কর দেয়ার কথা, এর সামান্য অংশই কর দেয়। আয়করদাতাদের একটি বড় অংশ আবার নানাভাবে কর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। কর ফাঁকি দিতে অনেকে নিজের টাকাকে অন্যের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ধার বা ঋণ হিসেবে উল্লেখ করে।
আমরা মনে করি, সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া গেলে কর ফাঁকি বন্ধ করা কঠিন নয়। বিভিন্ন দপ্তর ও এজেন্সির কাছে বিত্তবান করদাতার যে আর্থিক তথ্য থাকে তা কর বিভাগের সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত করলে কর ফাঁকি মোকাবিলা করা অনেক সহজ হবে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও নির্বাচন কমিশনও করদাতাদের আর্থিক তথ্য জানাবে এনবিআরকে। ফলে কেউ কর দেয়ার সময় সম্পদের তথ্য গোপন রাখলে তা ধরা পড়বে সহজে। সাধারণ নাগরিকদের অহেতুক বিড়ম্বনায় না ফেলে চিহ্নিত ফাঁকিবাজ বিত্তবানদের কাছ ধেকে করা আদায়ে সরকার মনোযোগ বাড়াবে বলেই প্রত্যাশা।