নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীয় আয় এসেছে দুই হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল দুই হাজার ১৬১ কোটি ডলার। সে হিসেবে প্রবাসীয় আয় বেড়েছে প্রায় ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীয় আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় তিন শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার।
বিদায় অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা। গত জুন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। তখন করোনার প্রকোপে চলাচল বন্ধের কারণে হুন্ডি বন্ধ ছিল। ফলে বৈধ পথে আয় আসা বেড়েছিল।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত মাসে কোরবানি ঈদ থাকায় বেড়েছে দেশের প্রবাসী আয়। ঈদের সময়ে দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে বছরের অন্য মাসের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন প্রবাসীরা, এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। এপ্রিল, মে ও জুনÑটানা এই তিন মাস ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
হঠাৎ রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের গতি বেড়ে যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে ব্যাংক খাতে। কেউ কেউ বলছেন, অনেকেই আগে পাচার করে নেয়া অর্থ এখন প্রবাসী আয়ের নামে দেশে ফিরিয়ে আনছেন। আর প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উচ্চ দর পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ডলার-সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয়ে, এমন ধারণা অনেক ব্যাংকারের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন মাসে আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত মাসে এসেছে ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের জুনে এসেছিল যথাক্রমে ১৩৬ কোটি, ১৮৩ এবং ১৯৪ কোটি ডলার।
দীর্ঘদিন ধরে যে ডলার-সংকট চলমান, তা কাটিয়ে ওঠা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমিয়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করা হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর এক লাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করার পর বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তবে নথিপত্রে ডলারের দাম ১১৭ টাকা হলেও ব্যাংকগুলো ১১৮ থেকে ১১৯ টাকা দরে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনেছে। যে ব্যাংক ডলারের যত বেশি দর দিচ্ছে, সেই ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে তত বেশি ডলার পাচ্ছে। এসব ব্যাংক আবার বেশি দামে অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। তাতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও এসব ব্যাংক থেকে ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়।
জুন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে বৃহস্পতিবার ২২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন যে পদ্ধতিতে হিসাব করে আসছে, সে অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। আগের দিন বুধবার যা ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ ও ২৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। আর নিট রিজার্ভ ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্থানীয় ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা ভ‚মিকা রেখেছে বলে ব্যাংক খাতের সূত্রগুলো জানাচ্ছে। পাশাপাশি রিজার্ভে বড় উল্লম্ফনের পেছনে ভ‚মিকা রাখে বিদেশ থেকে পাওয়া ঋণ ও সহায়তার অর্থ। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া ঋণ ও বাজেট সহায়তার অর্থ জুনের শেষ সপ্তাহে দেশে আসে। কর্মকর্তারা জানান, যেসব ঋণ এক বছরের মধ্যে শোধ দিতে হয় না, সেই ঋণ রিজার্ভে যুক্ত করা যায়।