বুধবার শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতের যে ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এর বিবর্ণ চিত্রই ফুটে উঠেছে। এটিএম কার্ড জালিয়াতি, রিজার্ভ চুরি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে এ বছর। নন-পারফর্মিং লোনও (এনপিএল) চলতি বছর বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যাংকিং খাতের জন্য ২০১৬ সাল তেমন একটা ভালো কাটেনি। তবে ভালো কিছু যে একেবারে ঘটেনি, তা নয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। প্রান্তিক মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এটি রেখেছে বড় ভূমিকা। ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক ঘটনা ও প্রভাব এতটাই যে, তাতে বছর শেষের পর্যালোচনায় ইতিবাচক কাজগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে ব্যাংকিং খাত এখনও রাখছে শক্তিশালী ভূমিকা। এ খাতের এমন পরিস্থিতি তাই কাম্য নয়। আমাদের ধারণা, এ থেকে শিগগির বেরিয়ে আসা না গেলে খাতটির প্রতি তৈরি হবে মানুষের আস্থাহীনতা। আমানতকারীরা সাধারণত ব্যাংকের দ্বারস্থ হন সঞ্চয়ের নিরাপত্তা ও মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু মূলধনের নিরাপত্তা না থাকলে এ থেকে যে তারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, তা জোর দিয়েই বলা যায়। এটিএম কার্ড জালিয়াতির মতো ঘটনা এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা যে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির যেসব ঘটনা ধরা পড়েছে, সেগুলোও এসব ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থায় চিড় ধরাবে বলে মনে হয়। আর ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে পরিমাণ এনপিএল রয়েছে, তা হতাশার কারণ ব্যাংকারদের জন্যও। এমন পরিবেশে ঋণগ্রহীতাদেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা প্রতিকূলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিই ছিল এ বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং দেশে-বিদেশে আলোচিত ঘটনা। চুরি হওয়া অর্থের কিছু অংশ ফেরত আনা গেলেও সিংহভাগের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়নি এখনও। ফলে প্রকৃত ঘটনা যেমন জানা যাচ্ছে না, তেমনি দেশ ও বিদেশে সরকারকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা প্রশ্নের। ঠিক কী কারণে এটি প্রকাশ হচ্ছে না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যে লক্ষ্যেই এটি করা হোক, রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারকে সচেষ্ট হতেই হবে। এজন্য যে ধরনের প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ দরকার, তা আমরা দেখতে চাই।
চলতি বছর ব্যাংকিং খাত যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তাতে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় যেসব প্রশ্ন বারবার উঠে এসেছে তা হলো: উন্নত প্রযুক্তির ওপর ব্যাংকগুলোর নির্ভরতা যেভাবে বাড়ছে, সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে কি? এনপিএল যেভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, এর ভার কীভাবে বইবে ব্যাংকগুলো? এ খাতে লাখো কোটি টাকারও বেশি যে অলস অর্থ রয়েছে, তার ভবিষ্যৎই-বা কী? তবে আশার কথা, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল। ব্যবসাক্ষেত্রে যে মন্দা বিরাজ করছে, তাও দীর্ঘ হবে বলে মনে হয় না। আমরা আশা করি, নতুন বছর ঘিরে ব্যাংকভিত্তিক যে ‘বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’গুলো হবে, তাতে বিনিয়োগের নতুন, উপযুক্ত ও নিরাপদ খাতগুলোই খুঁজে বের করবেন ব্যাংকাররা। এতে অলস অর্থ যেমন কমবে, তেমনি এর সুফল পাওয়া যাবে অর্থনীতিতে। আমানতকারীরাও পাবেন এর সুফল। মনে রাখা দরকার, নেতিবাচক ধারা দীর্ঘ সময় চললে তা এ খাতে বিপদ ডেকে
আনতে পারে। ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকিং খাত ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসুক সেটাই প্রত্যাশা।
Add Comment