২০১৪ সালে ওরিয়েন্টেশনের দিনটিতে কী অদ্ভুত একটা অনুভ‚তি ছিল। কেউ কাউকে চিনি না, শুধু জানি আমরা ব্যাচমেট। এক এক করে চারটা বছর পার করলাম একসঙ্গে। কত সুখ-দুঃখর, কত হাসিঠাট্টা ও রোমান্টিক গল্পে ভরপুর ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
বলছিলাম সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন সপ্তম ব্যাচের র্যাগ ডে উদযাপনের কথা। গত মাসের ১৬ অক্টোবর সকালে ক্যাম্পাসে ধবধবে সাদা টি-শার্ট পরে আমরা হাজির হই। গায়ে লেখা ‘র্যাগ ডে ৭ম ব্যাচ’। ক্যাম্পাসজুড়ে শুধুই আমরা। মার্কার পেন দিয়ে বন্ধুরা একে অন্যের টি-শার্টে লিখেছিল নানা কথা সেদিন।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১৯নং কক্ষে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে কেক কাটার পর শুরু হয় নাচ-গান ও রঙ খেলা। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই রঙে রঙিন হয়ে যাই। যে বন্ধুর সঙ্গে গত চার বছরে একদিনও কথা হয়নি, সেও রঙ মাখিয়ে দিচ্ছে, আর বলছে, বন্ধু মনে রাখবি তো! সকাল থেকে পুরোটা দিন ক্যাম্পাসটা ছিল আমাদের। ক্যাম্পাস জীবনের এই শেষ দিনটা মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্যই।
ওইদিন ক্যাম্পাসে রঙ মাখামাখি চলে অনেকক্ষণ। সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তারাও র্যাগ ডের আগাম মজা নিচ্ছিল।
প্রিয় ক্যাম্পাসে কাটানো চার বছর সময় আসলেই স্বপ্নের মতোই কেটে গেছে। সবার মুখে শুধু একটাই কথা, ‘মনে হচ্ছে এই তো সেদিন এলাম, আর কয়টা দিন বেশি থাকতে পারলে আরও ভালো লাগত।’ বিবিএর ইমতিয়াজ মাহমুদ সাদ্দাম বলেন, গত চার বছরে বন্ধুদের অনেক জ্বালাতন করেছি। তাই আর কিছু না হোক, এজন্যই তারা আমাকে অনেকদিন মনে রাখবে। ‘মিস করব তোদের, কবে পাব আবার তোদের,’ বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে তার। ‘জীবনে হয়তো এটাই সবচেয়ে ভালো ও সুন্দর সময় কাটাচ্ছি,’ এভাবে বলছিল সপ্তম ব্যাচের প্রিয়মুখ পারভেজ খান।
বিদায় কখনোই সুখকর হয় না। গত চার বছর খুব বেশি না হলেও স্মৃতির ঝুলিটা মনে হচ্ছে খুব ভারী হয়েছে। অনেক আনন্দ-বেদনার গল্প তৈরি হয়েছে এ সময়ে, ক্যাম্পাসের এ চিরসবুজ চত্বরে। কত স্মৃতি যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তা ভাবতেই বুকের বাঁ পাশটা চিনচিন করে ওঠে। চার বছরের এ অকৃত্রিম ভালোবাসা, বন্ধন কি ভুলে থাকা যায়!
প্রতিদিন যেখানে ক্লাস পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মত্ত থাকতাম, আজ সেই জায়গাগুলো খুব টানে। মনে হয়, যদি আবার যেতে পারতাম তাহলে কতই না মজা হতো; কিন্তু সময় বড়ই নিষ্ঠুর শুধু ভালো সময়গুলোকে স্মৃতি করে দেয়।
দিনজুড়ে সূর্যের কঠিন উত্তাপ ছিল, বিকালবেলা ছিল তার উল্টো। মিষ্টি বাতাস বইছিল তখন। বিদায়বেলা সবার চোখে জল ছলছল করছে। এরপর আমরা কে কোথায় থাকব তার ঠিক নেই। হয়তো সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাব। ক্যাম্পাসের এই জায়গাগুলো খুব মিস করব। সেই আড্ডা, সেই উচ্ছাস, এই প্রিয় ক্যাম্পাস ও মুখগুলোকে খুঁজে বেড়াব। তোদের সবাইকে খুব মিস করব।
মুন্নি আক্তার