ক্রীড়া ডেস্ক: ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় তার নামটা উপরের দিকেই থাকবে। এমন লাখো ভক্ত আছেন, যারা শুধু শহিদ আফ্রিদির ব্যাটে চার-ছক্কার ঝড় দেখবেন বলেই মাঠে যান। বসে পড়েন টেলিভিশন সেটের সামনে। সেই তুমুল জনপ্রিয় ক্রিকেটারটি অবশ্য তার সেরা সময় অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছেন। তাই তো গুঞ্জন ছিল এই মহাতারকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই বলবেন। অবশেষে গত পরশু রাতে সিদ্ধান্তটি জানিয়েই ফেললেন আফ্রিদি। সরে দাঁড়ালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনা থেকে।
তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রায় ২১ বছরের এক রঙিন অধ্যায়ের ইতি হলো। অবশ্য বয়সও হয়েছিল ঢের। জš§ ১৯৮০ সালের ১ মার্চ। ৩৬ পেরিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। বেশ কিছুদিন ধরে আফ্রিদির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের গুঞ্জন ছিল। সেই গুঞ্জনই এবার সত্য হয়ে ধরা দিলো। গত পরশু রাতে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) পেশোয়ার জালমি ও করাচি কিংসের ম্যাচ শেষে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন সাবেক এই অধিনায়ক।
পিএসএলে সে সময়টা উপভোগ্য ছিল তার। করাচির বিপক্ষে ২৮ বলে ৫৪ রান করেন তিনি। ইনিংসে ছিল ৫টি ছয় ও ৩টি চারের সমাহার। ঠিক এ অবস্থায় সরে দাঁড়ানোটাই যৌক্তিক মনে করেছেন তিনি। এই মারকুটে ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমি ভক্তদের জন্য খেলি। সবকিছু ঠিক থাকলে পিএসএলে আরও দুই বছর খেলতে চাই। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাচ্ছি। এ মুহূর্তে আমার দাতব্য সংস্থা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশকে পুরোপুরি দায়িত্ব ও পেশাদারির মনোভাব নিয়েই প্রতিনিধিত্ব করেছি।’
অবশ্য অনেক আগেই টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন আফ্রিদি। তবে আরও কিছুদিন পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফর্ম তার পক্ষে কথা বলছিল না। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই ব্যাটে রান নেই। সঙ্গে সমালোচনার তোপ! তাই তো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটের অধিনায়কত্বের সঙ্গে দলে জায়গা হারান এই অলরাউন্ডার। তারই পথ ধরে এই বিদায়।
পাকিস্তানের জার্সিতে সর্বশেষ ২০১০ সালে আফ্রিদি খেলেছিলেন টেস্ট। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটকেও বলেন গুডবাই। তারপর থেকে এই লেগস্পিনার হয়ে যান একজন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট। এই ফরম্যাটে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই ছন্দপতন! আফ্রিদিকে আর দলে ডাকেনি দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। অধিনায়কত্ব হারানোর সঙ্গে দল থেকেও বাদ!
প্রায় ২১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আফ্রিদি মাত্র ২৭টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। রান ১,৭১৬। সর্বোচ্চ রান ১৫৬। উইকেট নিয়েছেন ৪৮টি। ৩৯৮ ওয়ানডেতে সাফল্যও পেয়েছেন তিনি। করেছেন ৮,০৬৪ রান। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ১২৪। উইকেট নেন ৩৯৫টি। আর ৯৮ টি-টোয়েন্টিতে আফ্রিদি করেন ১,৪০৫ রান। উইকেট নিয়েছেন ৯৭টি।
তার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল বিদ্যুৎঝলকের মতো। কেনিয়ায় চার জাতি ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই চমক! ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলোড়ন তোলেন আফ্রিদি। মূলত সেই ইনিংসই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। তারই পথ ধরে আলাদা একটা ইমেজ গড়ে তোলেন পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার। মারকুটে ব্যাটিংই ছিল তার ট্রেডমার্ক, যাকে অনেকেই ‘বুম বুম আফ্রিদি’ বলে ডাকেন। সেই রঙিন ক্রিকেটারটি বিদায় বললেন। এখন সমাজসেবাতেই সময় কাটাবেন তিনি। আর সময় পেলে স্মৃতির বারান্দায় হেঁটে বেড়াবেন!
Add Comment