প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম:বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে’ বলেই বিদেশিরা আগ্রহী হয়ে উঠছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার বিবেচনায় এই আগ্রহ দেশের জন্য ইতিবাচক। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের এক বছর আগে বিদেশিদের ‘আনাগোনা বৃদ্ধির বিষয়ে’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মূল্যায়ন করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের নানা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রকাশ্যেই বিরক্তি প্রকাশের মধ্যে আগের দিন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওই বৈঠকে কী নিয়ে কথা হয়েছেÑজানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেখানে নানা বিষয়ের মধ্যে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা সেই কথাটি ইইউভুক্ত রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছি।
‘এবং অন্যদেরও সেই কথাটি বলা হচ্ছে। আমরাও চাই দেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক।’
এক প্রশ্নে হাছান বলেন, ‘বিদেশিদের আনাগোনা সবসময় ছিল। বিদেশিদের আনাগোনা বেশি হওয়া ভালো, তারা বাংলাদেশের ওপর ইন্টারেস্ট ফিল করছে।
‘বাংলাদেশ যেহেতু ইমার্জিং ইকোনমি, বিদেশিরা একটু বেশি আসবে। আমাদের বাণিজ্য বহুমুখী হবে, আমরা আমাদের পণ্য বিক্রি করতে পারব। তাদের আগ্রহ আছে বিধায় আসছে, এটি দেশের জন্য ভালো।’
আগামী কয়েক বছর পর বাংলাদেশ ক্রমেই আরও ‘ওপরে উঠবে’ বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। তার মতে, ওই আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের আনাগোনা অতীতের তুলনায় বেড়েছে।
‘যে দেশের অর্থনীতি চাঙা, বাজার বড় এবং ক্রমসম্প্রসারমাণ, সেখানে অন্যান্য দেশ যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় তাদের আগ্রহ বাড়বে, এটাই খুব স্বাভাবিক। সে কারণেই তাদের আনাগোনা আসা-যাওয়া বেড়েছে,’ বলেন হাছান।
বর্তমান সরকারের ১৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি’ও তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন আকার অনুযায়ী পৃথিবীর ষাটতম অর্থনীতির দেশ ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে জিডিপির বিচারে ২৫টি দেশকে পেছনে ফেলে গত ১৪ বছরে আমরা জিডিপিতে ৩৫তম, পিপিপিতে ৩১তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কি নাÑএমন প্রশ্ন ছিল মন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি এটি নিশ্চিতে ‘বিএনপির দায়িত্ব’ স্মরণ করিয়ে দেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে আসে। তবে সেই নির্বাচনে ‘আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার’ অভিযোগ তুলে আবার পুরোনো দাবিতে ফিরে গেছে; বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু সরকারি দলের নয়। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
‘কেউ যদি নির্বাচন বর্জন করে, কিংবা প্রতিহতের অপচেষ্টা চালায়, তাহলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক না করা, কিংবা অগ্রহণযোগ্য করার দায়-দায়িত্ব তাদের। আমরা চাই একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনের সরকার নির্বাচিত হোক।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য রেখেছেন, সে বিষয়েও প্রতিক্রিয়া জানান হাছান।
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে মূর্খের মতো বারবার ‘সরকারের অধীনে নির্বাচন’ কেন বলেনÑসেটিই হচ্ছে আমার প্রশ্ন? নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সরকার তখন শুধু ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকা পালন করে।
‘নির্বাচনকালে যে সরকার দায়িত্বে থাকে, পুলিশের একজন কনস্টেবল বদলি করারও ক্ষমতা থাকে না তাদের। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেমন একটি পক্ষ, বিএনপিও একটা পক্ষ। আমরা সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি।’
পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা পাকিস্তানকে কেন এত অনুকরণ করেন, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন? বাংলাদেশে আর কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না।
‘ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউকে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সব সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও ঠিক সেভাবে নির্বাচন হবে। চলতি সরকারই নির্বাচনকালে সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। পাকিস্তানের আদলে স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই।’