‘১৫ বছরে ২২ থেকে বেড়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারে বিদেশি ঋণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। তথ্যমতে, ১৫ বছরে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ও বেসরকারি খাতে ১৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর আগে ২০০৮ সাল শেষে বিদেশি ঋণ ছিল মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। গত ১৫ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৪২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদেশি ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আরও সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার ছিল। কারণ সক্ষমতা অনুযায়ী সবসময় বিদেশি ঋণ নিতে হয়। বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধে সরকার চাপে পড়বে।
সরকারের ঋণ যেকোনো সময় বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্রমেই জিডিপির শতাংশ হিসাবে সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ প্রতিবছর বাড়াতেই হচ্ছে।
২০১৪ সালে আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেখানে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৪২ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছে গেছে। তাই বলা চলে দেশের সাম্প্রতিক সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়ে গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ অতি দ্রুত অর্থনীতির জন্য বোঝা হিসেবে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
চলতি বছরেই সুদ পরিশোধ খাতে সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। শুধু বৈদেশিক ঋণের সুদাসলে কিস্তি পরিশোধ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে হয়তো চার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের এহেন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকারের মোট ঋণের বোঝা সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়া বর্তমান পর্যায়ে খুবই গুরুত্ববহ। প্রবাসী আয়ে গেড়ে বসা বিষফোঁড়া ‘হুন্ডি ব্যবসা’কে কঠোরভাবে দমনে ব্যর্থতা আনুষ্ঠানিক পথে প্রবাসী আয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করেই যাবে। উপরন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ও তেমন বাড়ছে না। জিডিপির অনুপাত হিসাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে উন্নীত না হলেও বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সরকারের খামখেয়ালি বিনিয়োগের স্পৃহা এখনো অব্যাহত থাকায় অতি দ্রুত বৈদেশিক ঋণ বেড়ে চলেছে। স্বল্প প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণের প্রবণতা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের নানা সূত্র থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের অদম্য আগ্রহ, ফলে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণও বেড়ে চলেছে। এসব ঋণের গ্যারান্টার হতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। এই একটি কারণে গত এক বছরে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বড়সড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামানো কঠিন হয়ে পড়বে। সম্ভাব্য প্রতিকূল সময় আসার আগেই বিদেশি ঋণে লাগাম টানতে সর্বাত্মক প্রয়াস নিতে হবে।