বিদেশি ঋণ যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়

 

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট-২০২৩ (আন্তর্জাতিক ঋণ প্রতিবেদন)’ প্রকাশ করেছে বৃহস্পতিবার। প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের সব দেশের এক যুগের ঋণ ও তা পরিশোধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ঋণ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন হলো ১২ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ২৬৫ শতাংশ। ১২ বছরে বেসরকারি ঋণ ১৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭.২১ বিলিয়ন ডলার। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, যাতে সরকারের প্রচ্ছন্ন দায় বাড়ছে। কারণ কোনো কারণে এসব সংস্থা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকারকে সে দায় বহন করতে হবে। আবার বেসরকারি খাতেও বিদেশি ঋণ বাড়ছে লাফিয়ে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ নেয়া কিংবা যথেচ্ছ ব্যয় করলে দেশ ঋণ-জালে আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে সক্ষমতা ও সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের বিষয়টি।

বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের মহাসড়কে রয়েছে। এ সড়কে অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু অর্থায়ন ঋণের অর্থে হলে সেটা অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কারণ রেট অব রিটার্ন নির্দিষ্ট না করে ঋণ নেয়ার প্রবণতা থাকলে ভবিষ্যতে দেশ ঋণ-ফাঁদে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশ্বে ঋণ-ফাঁদে পড়ে যাওয়া দেশের নজিরও কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলংকা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তার এর আগে গ্রিস বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ ঋণের জালে জড়িয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ওইসব দেশকে এখন বাজেট প্রণয়ন করতে হয় অনেক বছর আগে নেয়া ঋণের সুদ ও মূল ঋণ পরিশোধের রূপরেখা মাথায় রেখে। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় শ্রীলংকাকে রাষ্ট্রীয় নানা বিষয়ে নীতিগত ছাড়ও দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশও ঋণ-জালে আবদ্ধ হয়ে যাক, এমনটি কারও কাম্য নয়।

আমাদের ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর গুণগত বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার প্রায় কোনোটির কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। দুই থেকে তিনবার প্রকল্প সংশোধনের নজিরও রয়েছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় তা থেকে মানুষের যে সুফল পাওয়ার কথা ছিল, সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। অন্যদিকে বাড়ছে ঋণের দায়। ঋণ নেয়ার ফলে দেশ যেন কোনোভাবেই যেন এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়, আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না।

কোনো দেশের উন্নয়নে দাতা বা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সে ঋণ যেন দেশের জন্য ক্ষতিকর না হয়; সেদিকে লক্ষ্য রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ সহায়তা নিয়ে দেশ কী ধরনের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে, আদৌ হবে কি না; তা ঋণগ্রহণের আগেই নিবিড় বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০