নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। গতকাল সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবিতে ‘মিডিয়া ইউনিটি’ আন্দোলন করে আসছিল।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হয়, কেব্ল্ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনানুযায়ী, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাংলাদেশে ডাউনলিংক করা বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা ভঙ্গকারী সংশ্লিষ্ট বিদেশি টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউশনের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী অন্যান্য শাস্তি আরোপ করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবিতে ‘মিডিয়া ইউনিটি’র ব্যানারে আন্দোলন করছিলেন বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশের টাকা ‘অবৈধভাবে’ বিদেশে ‘পাচার’ হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবিতে গত বছরের ৫ নভেম্বর আন্দোলন শুরু করে মিডিয়া ইউনিটি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের জন্য আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন একজন আইনজীবী। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার পাঠানো এ আইনি নোটিসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিদেশি চ্যানেলে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ না হলে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়া হবে। ওই দিন তথ্যসচিব, বাণিজ্যসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিজি জাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকে এ আইনি নোটিস পাঠানো হয়।
সেই নোটিসে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কেব্?ল্ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন পাস হয়। ওই আইনের ১৯(১৩) ধারায় অনুসারে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না, যা লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। এ আইনের ১৫ ধারা অনুসারে কোনো অনুষ্ঠান ১৯ ধারার পরিপন্থি হলে সরকার তাৎক্ষণিক বা যাচাই করে ওই চ্যানেলের বিপণন প্রজ্ঞাপন ও সম্প্রচার সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে।
ইদানীং বাংলাদেশের বেশ কিছু কোম্পানি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তারা ভারতীয় চ্যানেলের জনপ্রিয়তার কারণে সেসব চ্যানেলে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে বেশি সংখ্যায় ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। কিন্তু অভিনয়শিল্পী এবং টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে এ কারণে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমে যাচ্ছে, যার সার্বিক প্রভাব পড়ছে সার্বিক খাতে।
বর্তমানে দেশে সরকারি চ্যানেল বিটিভির পাশাপাশি সংবাদ ও বিনোদনভিত্তিক বেসরকারি অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪১টি, যার মধ্যে সম্প্রচারে আছে ৩২টি। একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো যত দর্শক টানছে, দেশি চ্যানেলগুলো সেভাবে দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। মোট দর্শকের প্রায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় বাংলা চ্যানেল দেশে। বিশেষ করে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কলকাতার বাংলা চ্যানেল স্টার জলসা, জি বাংলা, জি সিনেমা, জলসা মুভিজসহ বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশি বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হয়।
Add Comment